নিজস্ব প্রতিবেদক, ছাতক (সুনামগঞ্জ): মাত্র এক বছরের ব্যবধান। এই স্বল্প সময়েই প্রশাসনিক দক্ষতা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করে সুনামগঞ্জের ছাতকবাসীর ‘আস্থার প্রতীক’ হয়ে উঠেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম। তবে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলি করে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার এই আকস্মিক বদলির খবরে ছাতকজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
এদিকে, বদলি আদেশের পর মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালেই ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন মিজ ডিপ্লোমেসি চাকমা। এর আগে গত ১ ডিসেম্বর ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এই সিনিয়র সহকারী কমিশনারকে ছাতকের ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। নতুন ইউএনও যোগদান করলে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে ছাতকে বদলি হয়ে এসেছিলেন মো. তরিকুল ইসলাম। যোগদানের পর থেকেই তিনি উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পৌর প্রশাসক, ভূমি কর্মকর্তা এবং শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এতগুলো গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েও তিনি ছাতকের প্রশাসনিক চিত্রে আমূল পরিবর্তন আনেন।
দালালমুক্ত প্রশাসন গড়তে তিনি ছিলেন আপসহীন। গত এক বছরে প্রায় ২৫০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন, বাজার সিন্ডিকেট এবং মাদক কারবারিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন তিনি। সরকারি প্রকল্পের (টিআর, কাবিখা, এডিপি) তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করায় রাজস্ব আদায় বাড়ে দ্বিগুণ।
ইউএনও তরিকুলের সবচেয়ে প্রশংসিত উদ্যোগ ছিল গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে আধুনিক মাছবাজার নির্মাণ। ৫৪ বছর ধরে যে স্থানটি ছিল ময়লার ভাগাড় ও গর্ত, মাত্র দুই মাসের প্রচেষ্টায় সেখানে গড়ে তোলা হয় দৃষ্টিনন্দন বাজার। মানবিকতার নিদর্শন হিসেবে এই বাজারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় জলদাস, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও দরিদ্র মৎস্যজীবীদের মাঝে।
এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রথমবারের মতো পৌর মেধাবৃত্তি চালু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ সংস্কার এবং রাতে অসহায় মানুষের দ্বারে খাবার ও সহায়তা পৌঁছে দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন ‘মানবিক প্রশাসক’। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন করা বাংলাদেশিদের আশ্রয় ও সেবা দিয়েও তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
জনবান্ধব এই কর্মকর্তার বদলির খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে স্মৃতিচারণ। স্থানীয়দের মতে, “আইনের প্রয়োগে তিনি ছিলেন যেমন কঠোর, মানুষের প্রয়োজনে তেমনই কোমল।” ছাতকবাসী মনে করছে, তরিকুল ইসলাম শুধু একজন ইউএনও নন, তিনি ছিলেন একজন ‘রোল মডেল’, যার শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।



