অপরাধচট্টগ্রামদুর্নীতিবিশেষ প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অদৃশ্য সাম্রাজ্য,অভিযোগের কেন্দ্রে আরএনবি কর্মকর্তা আমান উল্লাহ আমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চীফ ইনস্পেক্টর আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধচক্র নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই এসব অভিযোগের পাহাড় জমেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়,রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে তিনি কার্যত ‘অদৃশ্য ক্ষমতার সম্রাট’ হয়ে উঠেছেন।

রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে আরএনবিতে যোগদানের পর থেকেই আমান উল্লাহ প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। চট্টগ্রাম স্টেশনে তার টানা অবস্থান বারবার প্রশ্নের মুখে পড়লেও উর্ধ্বতন মহলের রহস্যজনক প্রভাব তাকে বারবার রক্ষা করে এসেছে। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে লাকসামে বদলির আদেশ হলেও তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিমের একটি ফোন কলেই বদলি স্থগিত হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আদেশ বাতিল হয় এবং আমান উল্লাহ পুনরায় চট্টগ্রামেই ফিরে আসেন। এরপর থেকে তার ক্ষমতার দাপট আরও বাড়তে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, টিকিট কালোবাজারি, স্টেশনের মাদক স্পট, অবৈধ ব্যবসা এবং প্রতিদিনের অনিয়মের ওপর তারই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। তিনি নিজের একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলেছেন, যারা স্টেশনের প্রতিটি অনিয়ম, চাঁদাবাজি, মাদক লেনদেন ও অবৈধ কাজ পরিচালনা করে। এসব খাত থেকে মাসিক লাখ লাখ টাকা তার হাতে যায় বলে দাবি অভ্যন্তরীণ সূত্রের। স্টেশনে কোনো ‘সেটিং’, ‘সিন্ডিকেট’, বা ব্যবসা,সবই নাকি তার ‘অনুমোদন সাপেক্ষ’।

একটি আলোচিত ঘটনার উল্লেখও উঠে আসে। গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনে হামলায় আহত হন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ। তাকে উদ্ধার করেন আমান উল্লাহ। পরে আজিজের কাছ থেকে উদ্ধার করা একটি পিস্তল তিনি নিজের হেফাজতে রাখেন। প্রশ্ন উঠেছে,অস্ত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে থানায় জমা না দিয়ে রাতভর কোথায় ছিল, কেন আমানের কাছেই ছিল, এসব বিষয়ের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি।

আরও ভয়াবহ অভিযোগ জানায় স্টেশন সংশ্লিষ্টরা,স্টেশনের দুটি হোটেলের অবৈধ ব্যবসা ও মাসোহারা থেকে শুরু করে মাদক চালান নিয়ন্ত্রণেও আমান উল্লাহর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ নিয়ে বহুবার জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোনো তদন্ত হয়নি, হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

রেলওয়ের ভেতরের কর্মকর্তাদের অভিযোগ চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধচক্র, দুর্নীতি ও অনিয়মের যে রাজত্ব চলছে তা রাজনৈতিক প্রভাব-প্রশ্রয়ে শক্তিশালী হয়েছে। একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও কর্তৃপক্ষ নীরব এ নীরবতা শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এখন সময়ের দাবি।

রেলওয়ে স্টেশনের সাধারণ যাত্রী, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন চট্টগ্রাম স্টেশনে চলমান ‘অদৃশ্য সাম্রাজ্য’ ভেঙে না দিলে রেলওয়ের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমবে। আর এ রাজত্বের কেন্দ্রে থাকা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা ও তদন্তই এখন সর্বস্তরের দাবি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button