ধর্মভীরুতার মুখোশে ভয়ংকর প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিজেকে সবসময় অতি ধর্মপরায়ণ ও সততার মূর্ত প্রতীক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। কিন্তু এই সাধু বেশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ংকর প্রতারক সত্তা। তার এই মুখোশ উন্মোচনের পর বেরিয়ে এসেছে বিশ্বাসভঙ্গ ও হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের এক লোমহর্ষক কাহিনী।
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও রাওয়া ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসারের সঙ্গে নজরুল ইসলাম মজুমদারের ছিল দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েই এক ভয়ংকর ফাঁদ পাতেন নজরুল। মেজর আফসারের সরলতাকে পুঁজি করে এবং তার অজান্তেই তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার বিশাল অংকের ঋণ হাতিয়ে নেন তিনি।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়, মেজর আফসার যখন জানতে পারেন যে নজরুল তাকে ব্যবহার করে এই বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তখন তিনি বারবার তা পরিশোধের তাগাদা দেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম মজুমদার কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো অনুসন্ধানে মেজর আফসার জানতে পারেন, শুধু তার প্রতিষ্ঠানই নয়, তার প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মীদের নামেও বিপুল অংকের ভুয়া ঋণ তুলে নিয়েছেন নজরুল।

বন্ধুর এমন চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও ঋণের বিশাল বোঝার চাপ সইতে পারেননি মেজর আফসার। আকস্মিক এই আঘাতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মেজর আফসারের মৃত্যুর পর তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো তৎকালীন সরকারের প্রভাব খাটিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার তাদের ওপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি করেন। ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, তিনি মৃত বন্ধুর পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি ও হয়রানির মাধ্যমে চরম সংকটের মুখে ঠেলে দেন।
২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অবশেষে এই প্রতারক আটক হন। ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের দাবি, নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও মেজর খন্দকার নুরুল আফসারের নামে নেওয়া এই ভুয়া ঋণ পরিশোধ করা হোক। একজন সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মেজর আফসারের নাম থেকে এই কলঙ্ক মুছে ফেলা এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।



