অপরাধচট্টগ্রামদুর্নীতিবিশেষ প্রতিবেদন

রেলওয়ে সমবায়ে সচিব সাখাওয়াতের ‘অদৃশ্য খুঁটি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ রেলওয়ে সমবায় ঋণদান সমিতি (সীমিত), চট্টগ্রাম—একসময় যা ছিল রেল কর্মচারীদের আস্থার প্রতীক, আজ তা নিমজ্জিত অনিয়ম আর দুর্নীতির অতলে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। আইন অনুযায়ী বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ ‘অকার্যকর’। অথচ এই মৃত কমিটিকে জীবিত দেখিয়েই চলছে লাখ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার নেপথ্য নায়ক হিসেবে উঠে এসেছে সমিতির সচিব সাখাওয়াত হোসেনের নাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সমবায় আইন-২০০১ ও বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী, গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সমিতির তত্ত্বাবধায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) কর্তৃক মনোনীত সভাপতি ও পরিচালকদের নিয়োগ এখনও দাপ্তরিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। ফলে আইনত এই মুহূর্তে কোনো আর্থিক লেনদেন বা চেক ইস্যু করার এখতিয়ার কারও নেই। কিন্তু সচিব সাখাওয়াত হোসেন আইনের তোয়াক্কা না করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালকদের ‘যৌথ স্বাক্ষর’ ব্যবহার করে দেদারসে অর্থ উত্তোলন করছেন।

সমিতির ডেসপাস রেজিস্টার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র আট দিনে (২৪ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর) ১০০টিরও বেশি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। সাধারণ সদস্য ও কর্মচারীদের অভিযোগ, বৈধ কমিটি ছাড়া এভাবে অর্থ উত্তোলন স্পষ্টত ফৌজদারি অপরাধ।

সচিব সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফর্দ এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে এবং ১৫ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে সচিব পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া বেনামি জমি কিনে প্রতিষ্ঠানের কোটি টাকা আত্মসাৎ, সিআরবি জোড়া খুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি দিনারকে চাকরিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা এবং কর্মস্থলে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রেল অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, কথিত ‘সিরাজ সিন্ডিকেটের’ আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব সাখাওয়াত হোসেন নিজের সাফাই গেয়ে বলেন, ‘‘রেলওয়ে মহাপরিচালক চারজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, যার অর্ডার শীঘ্রই প্রকাশ হবে। এর আগেও চেক উত্তোলনে কোনো আইনি বাধা নেই।’’ তবে তার এই ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাধারণ কর্মচারীরা।

জেলা সমবায় অফিসের রহস্যজনক নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, বারবার অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। এ অবস্থায় রেলওয়ে সমবায়ের সাধারণ সদস্যরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে এই অবৈধ অর্থ লুটপাট বন্ধ এবং সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা কঠোর আন্দোলনে নামবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button