উত্তরায় কোন অদৃশ্য শক্তিতে আবাসিক হোটেলে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকায় একাধিক হোটেল দীর্ঘদিন ধরে মাদক, জুয়া এবং নারী দেহ ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব হোটেলের কার্যক্রম প্রশাসনের নজরে আসলেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিশেষ করে আব্দুল্লাহপুর আাকবর টাওয়ারের নিচতলায় অবস্থিত ‘হোটেল ওয়ান স্টার’ দীর্ঘদিন ধরে এসব অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত।
একটি সংবাদ তদন্তে জানা যায়, হোটেলের কার্যক্রম নিয়ে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করলে, কাস্টমারদের জন্য সরাসরি ডিরেকশন এবং নির্দেশনা দেয়া হয়। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ফোনে জানিয়েছেন, “সোজা উত্তরা আব্দুল্লাহপুর আসুন, আমরা জানালার মাধ্যমে নির্দেশ দিব।” পৌঁছালে কয়েকজন আগে থেকেই প্রস্তুত থেকে সাংবাদিকদের আটকানোর চেষ্টা করেন। হোটেলের ভিতরে ঢুকে সাংবাদিকরা দেখতে পান ১৫–২০ জন নারী বিভিন্ন বয়সে বসে আছেন এবং সরাসরি তাদের সার্ভিস অফার করা হচ্ছে।
এখানে বিভিন্ন বয়সী নারীদের জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার খরচ ধার্য করা হয় এবং ইচ্ছা হলে সারারাত থাকতে দেওয়া হয়। তরুণদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব কার্যক্রম এক বিশেষ ‘বড় ভাই’ কর্তৃত্বে পরিচালিত হয়। কেউ তাদের কার্যকলাপে বাধা দিতে পারে না। এই ‘বড় ভাই’দের নাম প্রকাশ্যে বলা হয় না। তবে কার্ডে এইসব দালালদের নাম উল্লেখ থাকে, যারা সরাসরি যৌনকর্মীদের হোটেল বা বাসায় পৌঁছে দেয়ার কাজে যুক্ত।
হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট দালালরা কার্ড ব্যবহার করে কাস্টমারদের নিয়ে আসে। কার্ডে হোটেলের ঠিকানা দেওয়া হয় না। কেবল মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে এবং আগেই প্রস্তুত থাকা লোকেরা কাস্টমারদের হোটেলে পৌঁছাতে সাহায্য করে। কার্ড বিতরণের বিনিময়ে দালালরা প্রতিদিন চার-পাঁচশ টাকা আয় করে। এতে একাধিক যুবক এবং কিশোরও যুক্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, ১০–১৫ বছরের কিশোররাও কার্ড বিলির কাজে ব্যবহার করা হয়।
এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। এক তরুণ জানান, “এখানে তোদের কেউ কিছু বলবে না। নির্ভয়ে কার্ড দিয়ে যা করতে চাই, তারা তা করতে পারে।” এসব দালাল এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী ‘বড় ভাই’-দের দাপট এলাকায় নজিরবিহীন। প্রশাসনের অগ্রাহ্যতায় অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
সংবাদে উঠে আসে, এসব হোটেলে শুধু নারী দেহ ব্যবসা নয়, মাদক এবং জুয়ার মতো অপরাধও নিয়মিত হচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং হোটেল প্রশাসন সক্রিয় না হওয়ায় অপরাধীরা খুব সহজেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া, এসব কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায়ই রাজনৈতিক সাপোর্ট থাকারও আভাস পাওয়া যায়।
উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় এই ধরনের হোটেলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করা হলে, তরুণ সমাজের জন্য ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, আইনগত ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব।



