
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের আলোচিত অপরাধ জগতের শীর্ষ নাম ‘ছোট সাজ্জাদ’ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিন একাধিক খুনসহ ভয়াবহ সব মামলার আসামি হয়েও গোপনে চারটি হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে আরও অসংখ্য হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা বিচারাধীন থাকায় এখনই কারামুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি সামনে আসতেই আইন অঙ্গন ও নগরজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলাসহ চারটি আলাদা খুনের মামলায় মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিন। জামিনের বিষয়টি এতদিন গোপন থাকলেও সম্প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কারাবন্দি সাজ্জাদ ও তামান্না চারটি মামলায় জামিন পেয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।তবে পুলিশ ও কারা সূত্র জানায়, ছোট সাজ্জাদ মোট ১৯টি মামলার আসামি, যার মধ্যে রয়েছে ১০টি হত্যা মামলা। অপরদিকে তার স্ত্রী তামান্না শারমিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে অন্তত ৮টি মামলা, যার মধ্যে একাধিক হত্যা মামলাও অন্তর্ভুক্ত। ফলে কয়েকটি মামলায় জামিন পেলেও অন্যান্য মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বিচারাধীন থাকার কারণে তাদের মুক্তি মিলছে না।
১৯ আগস্ট ২০২৪ চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান সাজ্জাদ ও তামান্না।একই দিনে পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় এ দম্পতিসহ তিনজনকে জামিন দেন হাইকোর্ট।এরপর ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো. ফারুক হত্যা মামলায় জামিন পান তারা।একই দিনে পাঁচলাইশ থানার আফতাব উদ্দিন তাহসীন হত্যা মামলায়ও জামিন মঞ্জুর করা হয়।চারটি মামলাতেই বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমন এর দ্বৈত বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন। যদিও জামিন আদেশ যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হলেও তা চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছায় প্রায় আড়াই মাস পর ৮ ডিসেম্বর।
অপরাধ জগতের ভয়ংকর নাম ‘ছোট সাজ্জাদ’ হাটহাজারি উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন ও চান্দগাঁও এলাকায় পরিচিত ‘ছোট সাজ্জাদ’ বা ‘বুড়ির নাতি’ নামে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিনি প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত।
তার বিরুদ্ধে রয়েছে,নগরজুড়ে আলোচিত সন্ত্রাসী বাবলা হত্যা মামলা,ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী হত্যার একাধিক অভিযোগ,অস্ত্র, গুলি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা,
চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, ছোট সাজ্জাদ ছিলেন বিদেশে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদ-এর ঘনিষ্ঠ অনুসারী। তাকে ধরিয়ে দিতে এক সময় পুলিশ পুরস্কার ঘোষণাও করেছিল।
স্ত্রী তামান্নার ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ বহু,শুধু স্বামী নয়, ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। পুলিশ বলছে,জোড়া খুনের ঘটনায় সরাসরি সহযোগিতা,অপরাধে অর্থ জোগান,আশ্রয় ও তথ্য আদান-প্রদানের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের প্রায় দুই মাস পর,১০ মে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেটকারে গুলি করে জোড়া খুনের ঘটনায় তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ জানান,ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে তিনটি মামলায় জামিননামা এসেছে। তার স্ত্রী তামান্নার চারটি মামলায় জামিননামা পাওয়া গেছে। সাজ্জাদ বর্তমানে রাজশাহী এবং তামান্না ফেনী কারাগারে থাকায় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সেখানে পাঠানো হয়েছে।আইনজীবী ও অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি মামলায় জামিন পেলেও অসংখ্য হত্যা ও গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এই দম্পতির আইনি জটিলতা এখনও শেষ হয়নি। একের পর এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছোট সাজ্জাদ ও তামান্নার জামিন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্বচ্ছতা ও বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়েও।



