ফুটপাতে চা বিক্রি করাই কাল হলো ইসমাইলের, গভীর রাতে ছুরিকাঘাতে নৃশংস হত্যা, র্যাবের হাতে ধরা পড়ল দুই খুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ত লালদিঘী এলাকায় ফুটপাতে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা এক সাধারণ মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নগরজুড়ে।
কোতোয়ালি থানার আলোচিত ইসমাইল হত্যা মামলার তদন্তে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন রুবেল বৈদ্য ও রাজু নাথ। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত মোঃ ইসমাইল হোসেন (৩৩) পেশায় একজন চা দোকানদার। তিনি কোতোয়ালি থানাধীন লালদিঘী এলাকায় অরুন কুমার চৌধুরী মার্কেটের পূবালী ব্যাংকের সামনে ফুটপাতে অস্থায়ী একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ২৮ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ রাত আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের দিকে দোকান বন্ধ করে সাইকেল হাতে পায়ে হেঁটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ইসমাইল। পথে কোতোয়ালি থানাধীন জেলা পরিষদ বহুতল ভবনের বিপরীত পাশে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছামাত্র পূর্বপরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাতনামা তিনজন দুর্বৃত্ত তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
হামলাকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে ইসমাইলের বুকের বাম পাশে ও বাম হাতের কব্জির মাঝখানে একাধিকবার আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। হামলাকারীরা নিশ্চিত মৃত্যু ধরে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে টহলরত পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় ইসমাইলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত ইসমাইলের স্ত্রী নাহিদা আক্তার ফারজানা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৫২, তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি ১৮৬০।
ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে যে আলোচিত মামলার দুই আসামি রুবেল বৈদ্য ও রাজু নাথ কোতোয়ালি থানাধীন এলাকায় অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৪০ মিনিটে র্যাব-৭ এর একটি অভিযানিক দল কোতোয়ালি থানাধীন মেরিনার্স রোডস্থ ইয়াকুবনগর লইট্টাঘাটা শাহজালাল ইবাদত খানার সামনে পাকা রাস্তা থেকে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত রুবেল বৈদ্য (৩১) আনোয়ারা থানার শুয়া বাপের বাড়ি এলাকার বাসিন্দা এবং রাজু নাথ (৩৮) পটিয়া থানার দক্ষিণ মালিয়ারা এলাকার বাসিন্দা। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি টিপছোরা এবং একটি কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জব্দকৃত আলামতসহ তাদের চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্ববিরোধসহ আরও কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে নগরবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি হয়েছে। ফুটপাতে চা বিক্রি করা একজন সাধারণ মানুষের এমন করুণ পরিণতি নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।



