অপরাধএক্সক্লুসিভ

ট্রেনে ইয়াবা পাচারে জড়িত ওসি, ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার দীর্ঘদিনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম শহীদের বিরুদ্ধে ট্রেনে ইয়াবা পাচারের একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর তাকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ লাইনসে বদলি করা হলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় শাস্তি বা ফৌজদারি মামলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।

পুলিশ সূত্র জানায়, এস এম শহীদুল ইসলাম কয়েক দফায় প্রায় সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তার নেতৃত্বে রেলপথকেন্দ্রিক মাদক পাচারের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে, ট্রেনযোগে ইয়াবা পরিবহন, নিরাপদে পার করে দেওয়া এবং উদ্ধার কার্যক্রমের সমন্বয়ে ওসিসহ থানার ভেতরের কয়েকজন পুলিশ সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

রেলওয়ে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর আট হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। তদন্তে তার সঙ্গে ওসি এস এম শহীদুল ইসলামের যোগাযোগ ও সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রেলওয়ে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনসে বদলি করা হয়। তবে এরপরও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা ফৌজদারি কোনো মামলা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনে নজরদারির দুর্বলতা এবং রেলওয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার ঘাটতির সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র মাদক পাচার করে আসছিল। ওসি শহীদুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে আসার পর রেলওয়ে থানার আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক পাচারে জড়িত থাকার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, মাদক পাচার থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে ওসি শহীদুল ইসলাম চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীতে একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি নিজ উপজেলা আনোয়ারা এলাকায় বাড়ি ও জমিসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার সদ্য সাবেক ওসি এস এম শহীদুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, “সব অভিযোগই মিথ্যা। আমি কোথায় বাড়ি বা গাড়ির মালিক হলাম, তা নিজেও জানি না। কেউ যদি বলে দিত, তাহলে সেখানে গিয়ে থাকতাম।”

এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “অভ্যন্তরীণ তদন্তে মাদকের সঙ্গে ওসি শহীদুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণেই তাকে বদলি করা হয়েছে। মাদকের সঙ্গে যে পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, “মাদকের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য বা সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকলে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে নিয়মিত ফৌজদারি মামলা করতে হবে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।”

সব মিলিয়ে, রেলপথে মাদক পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় রেলওয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ও উদ্বেগ বাড়ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button