অপরাধঅব্যাবস্থাপনাঅর্থনীতিজাতীয়দুর্নীতিবানিজ্য সংবাদরাজনীতি

গাইবান্ধায় আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৯টি সেতুর কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রায় দেড় বছর ধরে গাইবান্ধায় ১০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৯টি সেতুর কাজ আটকে আছে। এর মধ্যে চারটি সেতুর কাজ শুরুই হয়নি। পাঁচটির কাজ বন্ধ। ফলে স্থানীয় লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এসব সেতুর নির্মাণকাজ আবার কবে শুরু হবে, তা নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোড এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। সরকারের অনেক টাকা বাড়তি খরচ হবে।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাকদহ এলাকার ফারুক হোসেন বলেন, যে সেতু আমাদের উপকারের জন্য নির্মাণ করা হয়, সেই সেতু এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পাশের পুরাতন সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।’

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলায় তিনটি প্যাকেজে মোট ১১টি সেতু নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয়। এগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৬৮০ দশমিক ৭৩ মিটার। সেতুগুলো নির্মাণে মোট ১১৬ কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। ‘জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন (রংপুর জোন)’ প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা জেলার অংশে এসব সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সওজ।

সূত্রটি জানায়, প্রথম প্যাকেজে দুটি সেতু ধরা হয়। একটি করতোয়া নদীর ওপর পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট সড়কের পলাশবাড়ী উপজেলার করতোয়াপাড়া এলাকায় এবং আরেকটি সেতু (ঘাঘট-৩) ঘাঘট নদীর ওপর সাদুল্লাপুর-নলডাঙ্গা সড়কের সাদুল্লাপুর উপজেলার জামুডাঙ্গা এলাকায়। সেতু দুটির দৈর্ঘ্য ২৪৩ দশমিক ৪৯ মিটার। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি ৫৮ দশমিক ৫২ লাখ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মঈন উদ্দিন (বাশি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) সৈয়দ ইমতিয়াজ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সড়ক বিভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বুঝে দিতে পারেনি।

২০২২ সালের ২ অক্টোবর সেতু দুটির কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর। এ সময়ে শুধু করতোয়াপাড়া এলাকার সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি যানবহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। জামুডাঙ্গা এলাকায় সেতুর পিলার ও পাটাতন (স্ট্রাকচার) কাজ সমাপ্ত হয়।
কিন্তু সংযোগ সড়কের কাজ হয়নি।

দ্বিতীয় প্যাকেজে ছয়টি সেতুর কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচটি সেতু গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের জেলা শহরের নিউ ব্রিজ রোড এলাকায় ঘাঘট নদীর ওপর একটি (ঘাঘট-২), সদর উপজেলার মাঠেরহাট এলাকায় একটি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হলহলিয়া এলাকায় একটি, বাজারপাড়া এলাকায় একটি ও কদমতলি এলাকায় একটি। অপরটি গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাকদহ এলাকায়। সেতু ছয়টির মোট দৈর্ঘ্য ২৯৭ দশমিক ৬০ মিটার। ব্যয় ধরা হয় ৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুদ হাইটেক।

২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত ৮ জানুয়ারি কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ সময়ে নিউ ব্রিজ রোড এলাকায় (ঘাঘট-২) এবং শাকদহ সেতুর পিলার ও পাটাতন (স্ট্রাকচার) কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সংযোগ সড়ক হয়নি। মাঠেরহাট এলাকায় সেতুর পাইল সম্পন্ন হয়ে কাজ বন্ধ আছে। এই প্যাকেজে বাজারপাড়া, হলহলিয়া ও কদমতলি এলাকায় সেতুর কাজ শুরুই হয়নি।

তৃতীয় প্যাকেজে আছে তিনটি সেতু। এগুলো হচ্ছে সাঘাটা উপজেলায় বারকোনা-জুমারবাড়ি-সোনাতলা সড়কের বাজিতনগর এলাকায় একটি ও একই সড়কের কালিতলা এলাকায় একটি। অপরটি আলাই নদীর ওপর গাইবান্ধা-বালাসি সড়কের সদর উপজেলার পুলবন্দী এলাকায়। সেতু তিনটির দৈর্ঘ্য ১৩৯ দশমিক ৬৩ মিটার। এতে ২৬ কোটি ৯৬ দশমিক ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। কাজের দায়িত্ব পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং মোহাম্মদ আমিনুল হক (পিভিটি) লিমিটেড।

২০২২ সালের ২ নভেম্বর তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর মধ্যে বাজিতনগর এলাকায় সেতুর কাজ সম্প্রতি শুরু করা হয়েছে। পুলবন্দী সেতুর পিলার ও পাটাতন (স্ট্রাকচার) কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সংযোগ সড়ক হয়নি। কালীতলা এলাকায় সেতুর কাজ শুরুই হয়নি।

সম্প্রতি সরেজমিনে শাকদহ এলাকায় একটি সেতু ছয়টি খুঁটির (পিলার) ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে দুই পাশের কোনো সংযোগ সড়ক নেই। সেতুর লোহার রডে মরিচা পড়েছে। সেতুর মুখ ঝোপজঙ্গলে ঢেকে গেছে।

পিলার ও পাটাতন সম্পন্ন হওয়া চারটি সেতু-সংলগ্ন এলাকাবাসীর ভাষ্য, প্রায় দেড় বছর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও শ্রমিকেরা সেতু এলাকা থেকে ইট সিমেন্ট, বালু ও নির্মাণ যন্ত্রপাতি গুটিয়ে নিয়ে গেছে। তখন থেকে সেতুর কাজ বন্ধ।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাকদহ এলাকার স্কুলশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা নতুন সেতুর লোহার রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিয়াস কুমার সেন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার কারণে ১১টির মধ্যে চারটি সেতুর কাজ শুরু করা যায়নি। অন্যান্য সেতুর কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে থেমে আছে। সেতুগুলোর কাজ সম্পন্ন করতে সময়সীমা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button