
মুহাম্মদ জুবাইর
চট্টগ্রামে মানবিক প্রশাসনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। চোখে আলো ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে বছরের পর বছর লড়াই করা এক অসহায় কিশোরী থেকে শুরু করে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরিবার কিংবা দুরারোগ্যে আক্রান্ত শিক্ষার্থী সবার শেষ ভরসার নাম এখন এই জেলা প্রশাসক। গণশুনানির মঞ্চ যেন পরিণত হয়েছে আশ্রয়হীন মানুষের নির্ভরতার জায়গায় যেখানে কেউই ফিরে যান না খালি হাতে। প্রশাসনের কঠোরতা নয় বরং সহমর্মিতা মানবিকতা এবং তাৎক্ষণিক সহযোগিতার মাধ্যমে অল্প সময়েই চট্টগ্রামবাসীর হৃদয় জয় করেছেন তিনি।
কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার ঠান্ডা মিয়া ও আমেনা খাতুন দম্পত্তির মেয়ে বিবি আয়েশা দীর্ঘদিন ধরে লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের ভাষায় তার চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পাঁচটি ইনজেকশন প্রয়োজন হলেও অর্থের অভাবে নিতে পেরেছেন মাত্র দুটি।
প্রতিটি ইনজেকশনের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।অসুস্থ স্বামী মুক্তার আহমেদকে নিয়ে তার জীবন দুর্বিষহ। একমাত্র ছেলে আলাদা থাকেন খবর নেন না। মেয়েও ব্যস্ত নিজ সংসারে। নিঃসঙ্গ এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না। শেষ ভরসা হিসেবে তারা হাজির হন জেলা প্রশাসকের গণশুনানিতে। কথা শুনেই তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক। সাহায্য পেয়ে চোখে জল নিয়ে বিবি আয়েশা বলেন ডিসি স্যার আমার কথা মন দিয়ে শুনেছেন শুধু সাহায্যই নয় দোয়া করতে বলেছেন।
একইভাবে পটিয়ার দক্ষিণ মনসা কুসুমপুরা ইউনিয়নের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর জান্নাত হোসেন রাজমী হরমোনজনিত জটিল রোগে আক্রান্ত। তার শারীরিক গঠন চার বছরের শিশুর মতো। প্রতি মাসে প্রয়োজন চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যের ইনজেকশন। এর আগে বহু জায়গায় ঘুরেও সহায়তা না পেয়ে হতাশ ছিল পরিবার। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে আশার আলো দেখছেন তার মা দিলোয়ারা বেগম।
সাতকানিয়ার মোবারক হোসেন ও তার স্ত্রী দুজনেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাদের পাঁচ বছরের সন্তান মারাত্মক রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা ব্যয়ে নিঃস্ব এই পরিবারও জেলা প্রশাসকের গণশুনানিতে সহায়তা পান। চট্টগ্রাম বধির সংঘের সদস্য এস এম মোজাফফর হোসেন বলেন এমন মানবিক জেলা প্রশাসক আমরা আগে দেখিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায় বুধবার সকাল দশটায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে সাতাশ জন সেবাপ্রত্যাশীর সমস্যা শোনা হয় এবং চারজন গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের এই জেলা প্রশাসক প্রতিদিনই প্রমাণ করছেন প্রশাসন চাইলে মানুষের জীবনে আলো হয়ে আসতে পারে। অসহায় মানুষ আজ জানে দরজায় কড়া নাড়লে সাড়া পাওয়া যায়।
কিছুদিনের মধ্যেই মানবিক কাজ আর দায়িত্বশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।



