অপরাধঅভিযানআইন-শৃঙ্খলাচট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে আতঙ্কের অবসান অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার বুইস্যা বাহিনীর প্রধান

মুহাম্মদ জুবাইর

চট্টগ্রাম মহানগরীর অপরাধ জগতের এক আলোচিত অধ্যায়ের ইতি টানল র‌্যাব ৭। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় সন্ত্রাস মাদক চাঁদাবাজি এবং অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করা শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক সম্রাট শহীদুল ইসলাম প্রকাশ বুইস্যাকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ৭ চট্টগ্রাম।

শনিবার ২০ ডিসেম্বর রাতে চান্দগাঁও থানাধীন ফিনলে সাউথ সিটি এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে একটি পিস্তল ও ৯ রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়।তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র চাঁদাবাজি নাশকতা ও মাদক সংক্রান্ত অন্তত ৪২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই চট্টগ্রামের চান্দগাঁও কাঁচাবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুখ্যাত টেম্পো বাহিনী ও বুইস্যা বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।ওই ঘটনায় রাতেই যৌথ বাহিনীর অভিযানে বুইস্যা গ্রুপের ১১ সদস্যকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারুদ ও লুট হওয়া পুলিশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতা শহীদুল ইসলাম বুইস্যা পালিয়ে যায়।
এরপর থেকে তাকে ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত চলছিল।

পরবর্তীতে গত ৪ অক্টোবর বুইস্যার অন্যতম সহযোগী মুন্নার প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নগরজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হলে বুইস্যা বাহিনীর সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে।এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় র‌্যাব ৭ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয় যে,শহীদুল ইসলাম বুইস্যা চান্দগাঁও এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বুইস্যা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় বসবাস করে আসছিল।চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় তার নেতৃত্বাধীন বুইস্যা বাহিনী এবং ইসমাইল হোসেন টেম্পোর গ্রুপ কথায় কথায় গুলি চাঁদাবাজি ছিনতাই মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে লিপ্ত ছিল।তাদের দাপটে সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল।ইতোমধ্যে টেম্পো বাহিনীর প্রধান ইসমাইল হোসেন টেম্পোও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে,বুইস্যা নিজস্ব কিশোর গ্যাং ব্যবহার করে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করত। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভুক্তভোগীদের অপহরণ করে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকার একটি গোপন আস্তানায় নির্যাতন চালানো হতো।সেখানে তার একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক ছিল,যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি আগেই তাকে জানিয়ে দিত।

র‌্যাব জানিয়েছে,গ্রেপ্তারকৃত শহীদুল ইসলাম বুইস্যার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।নগরবাসীর প্রত্যাশা,এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসী দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটবে এবং সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button