
মুহাম্মদ জুবাইর
নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ও সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামের ভারতীয় ভিসা সেন্টার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।শনিবার ২১ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাই কমিশন কার্যালয় ঘিরে ঘটে যাওয়া নিরাপত্তাসংক্রান্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভারতীয় ভিসা সেন্টারের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
পরিস্থিতি সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করে ভিসা সেন্টার পুনরায় চালুর বিষয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানানো হয়।একই তথ্য নিশ্চিত করে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র আইভ্যাকের ওয়েবসাইটেও একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়,নিরাপত্তাজনিত কারণে সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং খোলার তারিখ পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলার হাজারো ভিসা প্রত্যাশীর মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।চিকিৎসা ভিসা শিক্ষা ভিসা ব্যবসায়িক ভিসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আবেদনকারীরা হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন।অনেকেই আগে থেকে নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হওয়া এবং ভ্রমণ সূচি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাই কমিশন কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত,গত বৃহস্পতিবার ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গভীর রাতে নগরীর খুলশীতে ভারতের সহকারী হাই কমিশনের কার্যালয়ের সামনে একদল মানুষ অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।বিক্ষোভ চলাকালে তারা আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ সরজমিনে দেখা যায়।এতে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়।
খুলশীতে সহকারী হাই কমিশনের সামনে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীরা বারবার ওই সড়কে মিছিল করে এবং উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকে।সেসময় তারা ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাঁড়াও আমরা সবাই হাদি হবো গুলির মুখে লড়ে যাবো আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না ইনকিলাব ইনকিলাব জিন্দাবাদ নায়ারে তাকবির আল্লাহু আকবরসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যায়।
পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় রাত ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।পরে তারা সহকারী হাই কমিশনের সামনের সড়ক থেকে সরে যায়।তবে ওই রাতের উত্তেজনা ও সহিংসতার ঘটনায় কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।সাম্প্রতিক ঘটনার প্রভাবেই ভারতীয় ভিসা সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এবং ঝুঁকি কমলে ভিসা সেন্টার পুনরায় চালুর বিষয়ে ঘোষণা আসবে।ততদিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের ভিসা প্রত্যাশীদের অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকতে হবে।



