রাজনীতি

ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় বড় রদবদলের আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির তিন দিনের কর্মশালা শুধু একটি সাংগঠনিক আয়োজন নয় বরং এটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। যাদের কর্মশালায় ডাকা হয়েছে তাদের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা।বিপরীতে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কার্যত নিশ্চিত হয়ে উঠছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিএনপি এবার শুধু পুরোনো ঘোষণার ওপর নির্ভর করছে না বরং মাঠের বাস্তবতা জনসমর্থন সাংগঠনিক শক্তি এবং গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে শেষ মুহূর্তের হিসাব মিলাচ্ছে। এর ফলেই ঘোষিত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও একাধিক আসনে নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটছে।

ঝালকাঠি ২ আসনের ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টুসহ কয়েকজনকে কর্মশালায় না ডাকাকে স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।চট্টগ্রাম ৪ আসনে কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে আসলাম চৌধুরীকে ডাকার বিষয়টিও দলীয় সিদ্ধান্তে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।একইভাবে চট্টগ্রাম ৬ যশোর ৬ সহ আরও কয়েকটি আসনে ঘোষিত প্রার্থীদের বাদ পড়া দলীয় পুনর্মূল্যায়নেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে বিএনপি এবার শরিক রাজনীতিতেও নতুন কৌশল নিচ্ছে।২৮টি ফাঁকা আসনের কিছু অংশ শরিকদের জন্য রাখলেও শক্ত সংগঠন ও জনভিত্তি থাকা আসনগুলোতে ধানের শীষ নিজেদের হাতেই রাখতে চাইছে দলটি। লক্ষ্মীপুর জেলা তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার চারটি আসনেই বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়া রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। লক্ষ্মীপুর ২ আসনে আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর ৩ আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি লক্ষ্মীপুর ১ আসনে শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং লক্ষ্মীপুর ৪ আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজানের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়া প্রমাণ করে এই জেলাকে বিএনপি কৌশলগতভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেওয়া শুধু একটি আসন নিশ্চিত করেনি বরং বিরোধী জোটে ঐক্যের বার্তাও দিয়েছে। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর ৪ আসনটি জেএসডির জন্য ফাঁকা রাখার ধারণা ভেঙে সেখানে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়া দেখাচ্ছে যে আসন ছাড়ের রাজনীতি নয় বরং জয়ের সম্ভাবনাই এবার মূল বিবেচনা।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিভাগভিত্তিক মতবিনিময়কে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থীদের সরাসরি মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন মাঠ পর্যায়ের রিপোর্ট শোনার পরই এই পরিবর্তনগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে তিন দিনের কর্মশালা বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি নির্বাচনী কৌশলের দিক নির্দেশনাও দিয়ে গেছে। এতে পরিষ্কার হয়ে উঠছে বিএনপি এবার প্রতীক নয় বরং প্রার্থী এবং সংগঠনকেই সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে সামনে আনতে চায়। এই কৌশল মাঠে কতটা কার্যকর হয় তা নির্ভর করবে ভোটের পরিবেশ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।তবে এটুকু নিশ্চিত বিএনপির ভেতরে নীরব ঝড় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button