নতুন জেগে ওঠা চরের দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নোয়াখালীর হাতিয়ায় বনদস্যুদের দুই গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে নিহত ৫,থমথমে জাগলার চর
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার জাগলার চরে ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।মেঘনা নদীতে নতুন জেগে ওঠা এই চরের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সক্রিয় বনদস্যুদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দিনভর গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলেছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,জাগলার চরে সক্রিয় দুটি সশস্ত্র বনদস্যু গোষ্ঠীর মধ্যে আজ সকাল থেকে সারাদিন ধরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করেছে।এছাড়াও সংঘর্ষে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল থেকেই জাগলার চরে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সংঘর্ষের তীব্রতার কারণে দীর্ঘ সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি প্রবেশ করতে পারেনি।পরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর অধিকাংশই সকালের দিকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের জাগলার চর এলাকায় মেঘনা নদীতে নতুন করে জেগে ওঠা এই চরের দখল নিয়ে গত এক বছর ধরে উত্তেজনা চলছিল।
সরকারি কোনো দপ্তর থেকে এখনো এই চরের জমি কাউকে বরাদ্দ বা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।
তবে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু সশস্ত্র গ্রুপ নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে চরের বিভিন্ন অংশ দখলে নেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে জমি বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,জাগলার চরসহ আশপাশের নতুন জেগে ওঠা চরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বনদস্যুদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রশাসনের নজরদারি দুর্বল থাকায় এসব এলাকা ধীরে ধীরে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হচ্ছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,চর জাগলেই এখানে অস্ত্রধারীরা হাজির হয়।প্রশাসন না এলে তারা নিজেরাই আইন বানায়,জমি বেচে, আবার নিজেরাই যুদ্ধ করে।
আজকের সংঘর্ষের পর পুরো জাগলার চর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সংঘর্ষ থামলেও পরিস্থিতি এখনো থমথমে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওসি সাইফুল আলম বলেন,এটি মূলত চরের দখলকে কেন্দ্র করে বনদস্যুদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ।আমরা ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়েছি।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
নতুন জেগে ওঠা চরের মতো স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে সরকারি নজরদারি ও দ্রুত বন্দোবস্ত না থাকায় বারবার প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।জাগলার চরের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আবারও প্রশ্ন তুলেছে, এসব এলাকা কবে প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে?
পাঁচটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পরও কি বন্ধ হবে অবৈধ দখল আর অস্ত্রের মহড়া এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে হাতিয়ার মানুষের মনে।



