অভিযানআইন-শৃঙ্খলাচট্টগ্রামপ্রশাসন

মাটি মাফিয়াদের লোভের বলি ৭ বছরের রুমান

মুহাম্মদ জুবাইর

রাঙ্গুনিয়ায় ইটভাটার মৃত্যুফাঁদে নিভে গেল শিশুর প্রাণ, ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ মাটি পাচারকারী মাফিয়াদের লাগামহীন লোভের নির্মম খেসারত দিতে হলো মাত্র সাত বছরের এক শিশুকে।ইটভাটার জন্য ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা গভীর গর্তই হয়ে উঠল মৃত্যুফাঁদ।সেখানে পড়ে প্রাণ হারায় শিশু রুমান। অভিযোগ উঠেছে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে প্রভাবশালী মহল।তবে এবার চুপ নেই এলাকাবাসী।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দিনগত রাত প্রায় ১১টায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড,টেকপাড়া পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় একটি ইটভাটার মাটি খননের গভীর গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয় সাত বছরের শিশু রুমানের নিথর দেহ।নিহত রুমান ওই এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর রুমান নিখোঁজ হয়। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা পরিবার ও প্রতিবেশীরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটির কোনো সন্ধান পাননি।অবশেষে রাত ১১টার দিকে টেকপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের পাশে অবৈধভাবে কাটা একটি মাটি খননের গর্তে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয় তার লাশ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ,ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে।এসব গর্ত কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই খোলা অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। দিনের আলোয় যেমন বিপজ্জনক, রাতের বেলায় তা হয়ে ওঠে সরাসরি মৃত্যুফাঁদ।

স্থানীয়রা বলছেন,এই গর্তগুলো কেবল রুমানের নয় এগুলো পুরো এলাকার জন্যই কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ,অবৈধ মাটি পাচারের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।ফলে প্রতিবার দুর্ঘটনা ঘটলেও তা চাপা পড়ে যায়।প্রশাসনও কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না।কিছুদিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়,আবার শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব।

এলাকাবাসীর ভাষায়,মাফিয়াদের পকেট ভরে,আর মরতে হয় আমাদের সন্তানদের।শিশু রুমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভ।অবিলম্বে মাটি পাচারকারী মাফিয়াদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা।তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন এই ঘটনায় যদি দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়,তবে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন তারা।

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরমান হোসেন বলেন,শিশু মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত।রাত ১২টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি শিশুর প্রাণ যাওয়ার পরও কি থামবে না অবৈধ মাটি পাচার?আর কত রুমান মরলে নড়বে প্রশাসন?মাটি মাফিয়াদের এই রক্তমাখা লোভের শেষ কোথায়?
রুমানের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয় এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও মাটি মাফিয়াদের লাগামহীন দৌরাত্ম্যের জ্বলন্ত দলিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button