বাংলাদেশরাজনীতি

বাংলাদেশ–ভারত উত্তেজনা প্রশমনে উচ্চপর্যায়ের ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল সক্রিয় করা জরুরি

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ বাংলাদেশ–ভারত মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে উচ্চপর্যায়ের ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল সক্রিয় করা বাঞ্ছনীয়
—অধ্যাপক এম এ বার্ণিক

১. সম্পর্কের অবনতির কারণ : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বয়ান, আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যপ্রবাহের কারণে সম্পর্কের কিছু স্তরে অস্বস্তি ও উত্তাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে পর্যবেপক্ষমহল মনে করেন যে, দুই প্রতিবেশী দেশের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও দায়িত্বশীল পথ হলো উচ্চপর্যায়ের ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল সক্রিয় করা।

২. ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল কী ও কেন কার্যকর : ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল বলতে বোঝায়—প্রকাশ্য বিবৃতি ও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক বিবাদের বাইরে, বিশ্বাসভিত্তিক উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেখানে খোলামেলা আলোচনা সম্ভব।

এই চ্যানেলের বৈশিষ্ট্য:

নীরব (Quiet Diplomacy)

ব্যক্তিগত আস্থাভিত্তিক

সময়সংবেদনশীল ও নমনীয়

মিডিয়া-চাপমুক্ত

বিশেষত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে এটি উত্তেজনা প্রশমনের পরীক্ষিত কৌশল।

৩. বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
(১) কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা প্রশ্ন:
দূতাবাস ও কনস্যুলেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার। প্রকাশ্য চাপ নয়, বরং উচ্চপর্যায়ের সরাসরি আলোচনাই দ্রুত ফল দিতে পারে।

(২) রাষ্ট্র বনাম রাজনৈতিক বয়ান পৃথক করা: ব্যক্তিবিশেষ বা দলীয় ইস্যু রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেললে তা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। নীরব আলোচনায় এই সীমারেখা স্পষ্ট করা সহজ।

(৪) ভুল বার্তা ও অপপ্রচারের সংশোধন : উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগে সরাসরি অবস্থান ব্যাখ্যা করলে তৃতীয় পক্ষের বিভ্রান্তি কমে।

(৫). অপ্রয়োজনীয় জনমত সংঘাত এড়ানো:
প্রকাশ্য কূটনৈতিক বাকযুদ্ধ দুই দেশের জনমনে নেতিবাচক আবেগ সৃষ্টি করে, যা নিয়ন্ত্রণ কঠিন।

৪. ডি-এস্কেলেশন চ্যানেলের সম্ভাব্য কাঠামো:

উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর হতে পারে এমন কয়েকটি স্তর:

(১)পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সরাসরি যোগাযোগ

(২) বিশেষ দূত বা ট্র্যাক–১.৫ কূটনীতি

(৩) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের সীমিত আলোচনা

(৪) দূতাবাস–পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হটলাইন

উপরে বর্ণিত কাঠামো একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।

৬. সফল ডি-এস্কেলেশনের পূর্বশর্ত : ডি-এস্কেলেশন কার্যকর করতে হলে—

(১)উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা

(২) মিডিয়া ব্যবস্থাপনায় সংযম

(৩)উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকা

(৪)আলোচনার গোপনীয়তা রক্ষা
অপরিহার্য।

৭. দায়িত্বশীল ও কৌশলগত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত : বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক উত্তেজনার নয়, সহযোগিতার ইতিহাস বহন করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শক্ত অবস্থান ও সংযম—এই দুইয়ের ভারসাম্যই কূটনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি। উচ্চপর্যায়ের ডি-এস্কেলেশন চ্যানেল সক্রিয় করা তাই কোনো দুর্বলতা নয়; বরং এটি একটি পরিণত, দায়িত্বশীল ও কৌশলগত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত।

সময়মতো নীরব কূটনীতি উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে সম্পর্কের গভীরে জমে থাকা সহযোগিতার সম্ভাবনাই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button