
অপরাজ বিচিত্রা ডেস্কঃ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও অবদান আজ বিশ্ব স্বীকৃত। ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এ ঘটনায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত ও ৯ জন আহত হন। নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মণ্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে আমাদের এই বীর শহীদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের মানুষের জন্য সম্মানের ও গর্বের বলে জানিয়েছেন সিএলএনবি’র চেয়ারম্যান এবং বৈষম্য বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হারুনূর রশিদ।
আজ ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ (বুধবার) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে বেনিন শহীদ শান্তিসেনা দিবস উপলক্ষে সিএলএনবি ও বৈষম্য বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি উক্ত বক্তব্য প্রদান করেন। উল্লেখ্য, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়া ও সিয়েরালিয়ন থেকে শান্তি মিশন সমাপ্ত করে ১৫ সেনা কর্মকর্তা দেশে ফেরার পথে ২০০৩ সালে ২৫ ডিসেম্বর বেনিন সাগর উপকূলে বিমান দুর্ঘটনায় শহীদ হন।
বেনিন শহীদ শান্তিসেনাদের নামের তালিকাঃ- লে. কর্নেল শামসুল আরেফিন, মেজর আব্দুর রহিম মিয়া, মেজর মির্জা এম এ বাতেন, মেজর ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মেজর মোশাররফ হোসাইন, মেজর রওনক আক্তার, মেজর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আরিফুর রহমান তালুকদার, ক্যাপ্টেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন আলাউদ্দিন সর্দার, ক্যাপ্টেন রাকিবুল হাসান, ক্যাপ্টেন জাহিদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মাহবুব ও সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সফিকুল ইসলাম।
হারুনূর রশিদ বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সামরিক ও পুলিশ সদস্য পাঠানো দেশ বাংলাদেশ। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন শুরু হলেও বাংলাদেশ এতে যুক্ত হয় ১৯৮৮ সালে। ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রার সূচনা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের ৪০টি দেশের ৬৩টি মিশনে প্রায় ২ লক্ষ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ১৯৮৮ সন এ পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অবসরপ্রাপ্ত শান্তিরক্ষা সেনাদের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরো প্রায় ২ কোটি লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান সহ বৎসরে প্রায় ৮০-৮৫ বিলিয়ন ডলার আয় করার সুযোগ রয়েছে।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, আমাদের গৌরব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। সংঘাতময় দেশে শান্তি স্থাপন, দুর্গতদের উদ্ধার, আর্তের সেবা, অসুস্থ ও আহতদের সেবা ও দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের ১৭৪ জনকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। তাদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত। এ অবদানের কারণে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আলোচনা শেষে শান্তিরক্ষা মিশনে মৃত্যুবরণকারী দেশের সব শান্তিসেনা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত-শান্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
শান্তি সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কর্নেল (অবঃ) দিদারুল আলম বীর প্রতীক। আরও বক্তব্য রাখেন মহান মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার নুর আহম্মেদ, জননেতা নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর, সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বাবলু, প্রবীন বামপন্থী নেতা রফিকুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও ভোলা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইয়ের লেখক সাংবাদিক কালাম ফয়েজী, সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, এ্যাডভোকেট এম জাবির হোসেন, সিয়েরা লিওনের সাবেক মিশন প্রধান কর্ণেল (অবঃ) আশরাফ আল-দীন, দেশ ঐক্যের সভাপতি লেঃ কর্ণেল (অবঃ) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ ও মহাসচিব আবদুর রহীম চৌধুরী, শ্রমিক নেতা ফয়েজ হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল, প্রজন্ম একাডেমির কোষাধ্যক্ষ আবু হায়দার, সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মঞ্জুর, নারী নেত্রী জান্নাত ফাতেমা ও শেফালী হোসেন প্রমুখ।



