অব্যাবস্থাপনাদুর্নীতিপ্রশাসন

ঘুষ নিয়ে লকাপের আসামি ছাড়লেন এস আই , কিছুই জানি না’ বললেন আশুলিয়া থানার ওসি

মাহবুব আলম মানিক

আশুলিয়া থানার  উপ-পরিদর্শক পিপিএম  (এসআই) আনোয়ার  এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, থানার লকাপে দুই ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই দুই ব্যক্তি হলেন, মো: সুজন মিয়া পিতা আব্দুল হামিদ গ্রাম নেচটা থানা,জেলা, জামালপুর। 

অপর ব্যক্তি মো: গফুর  পিতা, মো: সমু গ্রাম, থানা, পলাশবাড়ি জেলা, গাইবান্ধা।  উভয়ে বর্তনান আশুলিয়ার ভাদাইল শিরু মার্কেট এলাকার বাসিন্দা। 

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, কোনো মামলা কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই ওই ব্যক্তিদের আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের কয়েক ঘণ্টা থানার লকাপে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার শর্তে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, টাকা না দিলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির  মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে পরিবারের সদস্যরা ৪০ হাজার টাকা প্রদান করলে ওই ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

থানার লকাপে আটকে রেখে টাকা আদায়ের বিষয়ে ভুক্তভোগী সুজন মিয়া বলেন,  

সিরু মার্কেটে আমার একটি  অটো রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। কিছু দিন পূর্বে আমার গ্যারেজের একজন রিকশা চালক গফুর ভাইয়ের ছেলে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ব্যাটারী চালিত রিকশা কিনে আমার গ্যারেজে রেখে যান। দুইদিন পর  আশুলিয়া থানার এস আই আনোয়ার এসে বলেন গাড়িটি চোরাই গাড়ি। 

এটি মিরপুর থেকে চুরি করে আনা হয়ছে। একথা বলেই আমাকে হাতকড়া পরিয়ে ফেলে। পরে আমি গফুর ভাইকে লোক মাধ্যমে ডেকে আনলে তাকেও হাতকড়া পরিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে আমাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। চুরি না করেও কেনো টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে আমাদের থানায় নিয়ে লকাপে ৪ ঘন্টা  আটকে রাখে। সেখানেও মোটা অংকের টাকা দাবী করে। নিরুপায় হয়ে দুই জনে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাহির হয়ে আসছি। 

ভুক্তভোগী গফুর বলেন রিকশাটা আমার ছেলে কিনেছে এখানে আমার কি অপরাধ।তবুও আমাকে থানায় আটকে রেখে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি গরিব মানুষ সুদের উপর টাকা নিয়ে দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীর এক স্বজন বলেন,

“আমাদের কোনো উপায় ছিল না। ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে।”

ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা বলছেন, থানার ভেতরে এমন ঘটনা ঘটলে তা পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রশ্নের মুখে পড়ে।

লকাপে আটকে রেখে ঘুষ বানিজ্যর বিষয়ে এস আই আনোয়ার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি  অফিসিয়ালী বক্তব্য দেননি , তবে খোশগল্পে বলেন লাকাপে না তাদেরকে নারী শিশু ডেক্সে রাখা হয়েছিল। আর  ৪০ হাজার নয় ৩৫ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে।  আমার হাত দিয়ে আমি কোন টাকা পয়সা নেইনি, আমি শুধু ৫ হাজার  টাকা পেয়েছি।  

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)- রুবেল হাওলাদার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে দায় এড়িয়ে বলেন,

“এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে আনোয়ারের কাছে জানতে হবে। অথবা আপনারা তার সাথে যোগাযোগ করেন।

তবে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, তালবাহানা আর লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে বিষয়টি দ্রুত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা জরুরি। তারা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযোগের বিষয়ে থানার পক্ষ থেকে কোনো বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে কি না—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button