অতিরিক্ত নিরাপত্তা কি তারেক রহমানকে জনবিচ্ছিন্ন করছে-না

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ —অধ্যাপক এম এ বার্ণিক
১. দেশে ফিরেই কঠোর নিরাপত্তা-বেষ্টনিতে তারেক রহমান : বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব কেবল নীতিনির্ধারণ বা কৌশলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ, আবেগ ও আস্থার এক জীবন্ত সম্পর্ক। এই বাস্তবতায় অতিমাত্রায় প্রোটোকল ও কঠোর নিরাপত্তা-বেষ্টনি কোনো নেতাকে সাময়িকভাবে সুরক্ষা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তাকে জনমানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। তারেক রহমানের রাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশ্নে এই বিষয়টি ক্রমেই আলোচনায় আসছে।
২.নেতৃত্বের শক্তি ও জনগণের নৈকট্য : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান কিংবা মওলানা ভাসানীর মতো নেতাদের জনপ্রিয়তার মূল উৎস ছিল জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। জনসভা, পথসভা, হাট-বাজার—এসব জায়গায় তাদের উপস্থিতি সাধারণ মানুষের মনে আস্থা ও ঘনিষ্ঠতার অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল। এর বিপরীতে, কোনো নেতা যদি প্রোটোকলের কাচের দেয়ালে বন্দী হয়ে পড়েন, তবে তার রাজনৈতিক বার্তা জনতার হৃদয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হতে পারে।
৩. সুরক্ষা না দূরত্বের দেয়াল : নিরাপত্তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষত বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত বাস্তবতায়। কিন্তু যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিমাত্রায় দৃশ্যমান ও কঠোর হয়ে ওঠে, তখন তা নেতার চারপাশে এক ধরনের অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করে। জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, হাত মেলানো বা অনানুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত হওয়া যদি অসম্ভব হয়ে পড়ে, তবে নেতার প্রতি মানুষের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।
৪. তারেক রহমানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রভাব : তারেক রহমানের রাজনীতি আজ এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে তার নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে নির্ভর করবে মাঠপর্যায়ে জনগণের সঙ্গে তার যোগাযোগের গভীরতার ওপর। যদি তিনি অতিরিক্ত প্রোটোকল ও নিরাপত্তার কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যান, তবে বিরোধীরা সহজেই তাকে “দূরবর্তী” বা “এলিট-কেন্দ্রিক” নেতা হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ পাবে। এতে করে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও একধরনের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।
৫. শুরুতেই ভারসাম্য বিনষ্ট : এক্ষেত্রে প্রয়োজন একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে নিরাপত্তা থাকবে, কিন্তু তা নেতার মানবিক ও সহজলভ্য ভাবমূর্তিকে ঢেকে দেবে না। সীমিত প্রোটোকল, নিয়ন্ত্রিত কিন্তু উন্মুক্ত জনসংযোগ এবং প্রতীকীভাবে হলেও মাঠপর্যায়ে উপস্থিতি তারেক রহমানকে জনগণের আরও কাছে নিয়ে যেতে পারে।
৬. জনবিচ্ছিন্নতা কাম্য নয় : রাজনীতিতে প্রোটোকল ও নিরাপত্তা একটি প্রয়োজনীয় বাস্তবতা, কিন্তু তা যদি নেতৃত্বের মূল শক্তি—জনগণের সঙ্গে সংযোগ—কে ক্ষুণ্ন করে, তবে সেটি আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তারেক রহমানের জন্য সময়ের দাবি হলো নিরাপত্তা ও জনসম্পৃক্ততার মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করা। নইলে অতিমাত্রায় প্রোটোকলই তাকে ধীরে ধীরে এক জনবিচ্ছিন্ন নেতায় পরিণত করতে পারে।



