রাজনীতি

লায়ন আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র দাখিল

মুহাম্মদ জুবাইর

চট্টগ্রাম ৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী লায়ন মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র দাখিল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৪ সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী।মনোনয়নপত্র দাখিলকে ঘিরে সকাল থেকে এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।সমর্থকরা শোভাযাত্রা করে তাঁকে নির্বাচন অফিসে পৌঁছে দেন।মনোনয়নপত্র দাখিলের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে আসলাম চৌধুরী বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচন করছে।চট্টগ্রাম ৪ আসনের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছেন।আমি বিশ্বাস করি,তারা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে ভোট দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও সুসংহত করবেন।

তিনি আরও বলেন,এলাকার উন্নয়ন,বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি,স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি আমার প্রধান অগ্রাধিকার হবে।রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই,যেখানে বিদ্বেষ নয়,সহযোগিতা ও উন্নয়নই হবে প্রধান লক্ষ্য। জনগণ আমাকে আগে যেমন সমর্থন দিয়েছে, ইনশাআল্লাহ এবারো পাশে থাকবে।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।কেউ কেউ হাতে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে সমর্থন জানান।স্থানীয়রা জানান,নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় ইতোমধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে।বিভিন্ন প্রার্থীর তৎপরতা ও গণসংযোগে নির্বাচনমুখী পরিবেশ গড়ে উঠেছে।

দীর্ঘদিনের রাজনীতির পথচলা,লায়ন মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।তিনি দলের কেন্দ্রীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকার জন্য পরিচিত।বিএনপির দুর্দিনে দলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তিনি সমর্থকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিবেচিত হন।এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম ৪ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।

মনোনয়নপত্র দাখিলের পুরো প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়।প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,তথ্য ও হলফনামা দাখিল করতে হয়।নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে,প্রার্থীর দাখিল করা কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে তফসিল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।যে কোনো ত্রুটি বা আপত্তি থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে।
এদিকে আসন্ন নির্বাচনে এই আসনটি নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফলে ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে,ততই বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনের তৎপরতা।

চট্টগ্রাম ৪ আসনটি ঐতিহ্যবাহী ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা।এখানে শিল্পাঞ্চল,বাণিজ্যকেন্দ্র, কৃষিভিত্তিক গ্রাম ও জনবহুল নগর এলাকার সমন্বয় দেখা যায়।ফলে ভোটারদের চাহিদাও বহুমাত্রিক।কেউ উন্নত সড়ক ব্যবস্থা, কেউ কর্মসংস্থান, কেউ বা আইন শৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তা চান।অনেকে আবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন।
স্থানীয় নাগরিকরা জানান, প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন।কিন্তু নির্বাচনের পর অনেক প্রতিশ্রুতিই আর বাস্তবায়িত হয় না।তাই এবার তারা এমন একজন প্রতিনিধিকে বেছে নিতে চান,যিনি সত্যিকার অর্থে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এবং সকল শ্রেণি–পেশার মানুষের সাথে সমন্বয় বজায় রাখবেন।

মনোনয়নপত্র দাখিল পরবর্তী সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসলাম চৌধুরী বলেন,তিনি একটি অবাধ,সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ প্রত্যাশা করেন। নির্বাচনে যদি ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন, তাহলে বিএনপি বিজয়ী হবে বলেও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন,রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষ নয়,বরং নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্র রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করব।জনগণই চূড়ান্ত রায় দেবে।আমি জনগণের আদালতেই বিশ্বাস করি।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান,দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সংগঠনের ভেতরে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।অনেকদিন পর বড় পরিসরে নির্বাচনী মাঠে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তারা উজ্জীবিত। বিভিন্ন মহল্লা,ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বৈঠক এবং মতবিনিময় শুরু হয়েছে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রচারণা।

তবে নেতাকর্মীরা এটাও স্বীকার করেছেন যে,নির্বাচনী লড়াই সহজ হবে না।প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোরও শক্ত ভিত্তি রয়েছে।তাই নির্বাচনে জয় পেতে হলে সুসংগঠিত প্রচারণা,ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এবং এলাকার সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনই হবে প্রধান লক্ষ্য।

দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন শুধু প্রার্থী বা দলের লড়াই নয়,এটি জনগণের অংশগ্রহণের একটি বৃহৎ আয়োজন। চট্টগ্রাম ৪ আসনেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তেমনি এক গণতান্ত্রিক উৎসবের আবহ তৈরি হচ্ছে।চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজার, পারিবারিক আড্ডা সব জায়গায় এখন আলোচনার মূল বিষয় আসন্ন নির্বাচন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,সঠিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এই আসনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।কারণ চট্টগ্রাম অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে প্রধান দুই দলের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ৪ আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী উত্তাপ আরও বেড়েছে।এখন অপেক্ষা যাচাই বাছাই,প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রচারণা শুরুর। আর সেই সঙ্গে ভোটারদের মাঝেও প্রত্যাশা বাড়ছে তারা যেন একটি স্বাধীন,স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন।

লায়ন মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীসহ অন্যান্য প্রার্থীরাও এখন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।শেষ পর্যন্ত কে হাসবেন বিজয়ের হাসি,তা নির্ভর করবে জনগণের রায়ের ওপর। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট চট্টগ্রাম ৪ সীতাকুণ্ড আসনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি লড়াই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button