খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানালেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামিক স্কলার ও জনপ্রিয় আলেম ড. মিজানুর রহমান আজহারী।মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহল থেকে শোক প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ইসলামিক চিন্তাবিদ ড. মিজানুর রহমান আজহারীও তাঁর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া শোকবার্তায় তিনি লেখেনবাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন।ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন,ভালো কাজগুলোকে কবুল করুন এবং জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিন।
সংক্ষিপ্ত হলেও আবেগঘন এই বার্তায় তিনি মৃত্যুকে দুনিয়ার সফরের সমাপ্তি হিসেবে উল্লেখ করে মুসলিমদের রীতি অনুযায়ী দোয়া ও সমবেদনা জানান।পোস্ট দেওয়ার পর মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার ও আলোচিত হয়।হাজার হাজার মন্তব্যে নেটিজেনরাও প্রয়াত নেত্রীর জন্য দোয়া কামনা করেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে,দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া।কিডনি ও হৃদরোগের পাশাপাশি সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পরও শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন তাঁর বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান,নাতনী জাইমা রহমানসহ পরিবারের নিকট আত্নীয়রা।এছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী যার নেতৃত্বে তিনবার সরকার গঠিত হয়।তিনি ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী।স্বামী হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং ধীরে ধীরে বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে নানা সংকট,মামলাবহুল জীবন ও কারাবাসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।তবুও তিনি ছিলেন দেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী এক ব্যক্তিত্ব।
ড. মিজানুর রহমান আজহারীর শোকবার্তা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।অনেকে এটিকে মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেন।অনেকেই মন্তব্য করেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এভাবে সম্মান প্রকাশ করা বাংলাদেশের সামাজিক সংস্কৃতিরই অংশ।
আজহারী বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা জাতীয় সংকট মুহূর্তে তাঁর মতামত ও দোয়া প্রকাশ করে থাকেন।তাঁর অনুসারীরা মনে করেন,একজন আলেম হিসেবে এ ধরনের শোকবার্তা সমাজে সহমর্মিতা ও ইতিবাচক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিএনপি ও সমর্থকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই তাঁর রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষ তাঁর জন্য দোয়া ও শোকবার্তা প্রকাশ করছেন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে তাঁকে কোথায় দাফন করা হবে সে বিষয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল অনুযায়ীও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।তাঁর মৃত্যুতে সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো।তবে দেশের রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা, অবদান এবং বিতর্ক দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকবে এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।



