চার মাস গোপন রাখার পর মুখপাত্র আবু ওবায়দার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল হামাস

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের আইকনিক মুখপাত্র আবু ওবায়দা আর নেই। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, তিনি আজ নন, বরং আজ থেকে প্রায় ৪ মাস আগেই এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন।
গতকাল রাতে এক অডিও বার্তায় আল-কাসসাম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কেন ৪ মাস গোপন রাখা হলো?
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কমান্ডার এবং মুখপাত্র আবু ওবায়দা ৪ মাস আগে গাজায় দখলদার বাহিনীর এক বর্বরোচিত বিমান হামলায় শাহাদাতবরণ করেন।” মৃত্যুর খবর এতদিন গোপন রাখার কারণ হিসেবে সংগঠনটি ‘কৌশলগত ও নিরাপত্তা’ ইস্যুকে সামনে এনেছে।
সংগঠনটির দাবি, যুদ্ধের ময়দানে যোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখা এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করতেই এই মৃত্যুর খবরটি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। বিগত কয়েক মাসে আবু ওবায়দার নামে যেসব অডিও বা ভিডিও বার্তা প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো ছিল আগে থেকে রেকর্ড করা বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নেওয়া—এমন গুঞ্জনও এখন জোরালো হচ্ছে।
যেভাবে নিহত হলেন তিনি
অসমর্থিত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, গাজার একটি সুড়ঙ্গে অবস্থান করার সময় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টার্গেটেড হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরবর্তীতে মারা যান। সে সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছিল যে তারা হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, তবে তখনো আবু ওবায়দার মৃত্যুর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
কে ছিলেন এই আবু ওবায়দা?
লাল কেফিয়াহ (আরবীয় রুমাল) দিয়ে মুখ ঢাকা আবু ওবায়দা গত এক দশকে হামাসের ‘মিডিয়া ফেস’ বা প্রচারণার মূল মুখ হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের পর থেকে তাঁর নিয়মিত ভিডিও বার্তাগুলো ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি আরব বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁর আসল পরিচয় বা চেহারা কখনোই প্রকাশ্যে আনা হয়নি, যা তাঁকে এক রহস্যময় চরিত্রে পরিণত করেছিল।
ইসরায়েল তাকে বহুবার হত্যার হুমকি দিলেও তিনি প্রতিবারই ফিরে এসেছিলেন নতুন কোনো ভিডিও বার্তা নিয়ে। তবে এবারের দীর্ঘ অনুপস্থিতি এবং অবশেষে হামাসের এই স্বীকারোক্তি তাঁর অধ্যায়ের সমাপ্তি টানল।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিল যে আবু ওবায়দা হয় নিহত হয়েছেন অথবা গুরুতর আহত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছেন। হামাসের এই ঘোষণার পর ইসরায়েলি পক্ষ থেকে এটিকে তাদের সামরিক সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৪ মাস পর এই খবর প্রকাশ করার অর্থ হলো—হামাস এখন নতুন কোনো নেতৃত্বের কাঠামো বা মুখপাত্রের নাম ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবু ওবায়দার মৃত্যু হামাসের প্রচারণাযুদ্ধে একটি বড় ধাক্কা হতে পারে, তবে সংগঠনটি জানিয়েছে, “ব্যক্তি বিশেষের মৃত্যুতে আমাদের প্রতিরোধ থামবে না।”



