আইন ও বিচারআইন, ও বিচারজাতীয়দেশবাংলাদেশরাজনীতিরাষ্ট্রনীতি

‘জিরো রিটার্ন’ বিপজ্জনক: মিথ্যা তথ্য দিলে ৫ বছরের জেল হতে পারে – এনবিআর চেয়ারম্যান

অনলাইন রিটার্ন দাখিলে করদাতাদের সতর্কবার্তা, দায় এড়ানোর সুযোগ নেই

ঢাকা: কর ফাঁকি দিতে অনেকে অনলাইনে ‘জিরো রিটার্ন’ বা শূন্য রিটার্ন দাখিল করছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আয়কর আইনে ‘জিরো রিটার্ন’ বলে কোনো ধারণার অস্তিত্ব নেই।

‘জিরো রিটার্ন’ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্বেগ
রিটার্ন দাখিল সহজ করতে এনবিআর অনলাইনে ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করলেও অনেক করদাতা এই সুবিধার অপব্যবহার করছেন। তারা ব্যাংক এফডিআর, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি বা অন্যান্য কোনো সম্পদ না দেখিয়েই শূন্য রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “আয়কর আইনে জিরো রিটার্ন বলে কোনো কনসেপ্ট বা নিয়ম নেই। করদাতা রিটার্নে যা কিছু ডিক্লেয়ার করছেন, সেটা তাঁরই বক্তব্য। যদি তা মিথ্যা হয়, তাহলে আয়কর আইনে পাঁচ বছরের জেলের বিধান আছে।” তিনি এই ধরনের রিটার্নকে “এক্সট্রেমলি ডেঞ্জারাস” (চরম বিপজ্জনক) বলে উল্লেখ করেন। এনবিআর সহসাই এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করবে বলেও জানান তিনি।

আইনের কঠোরতা ও প্রমাণ সহজ
৯ আগস্ট (শনিবার) আইসিএমএবি-এর একটি অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান কর ফাঁকির মামলায় আমেরিকার উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ করফাঁকির মামলায় জেল খাটে। তিনি বলেন, কর ফাঁকি প্রমাণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। “আপনার ব্যাংকে এফডিআর আছে, রাজস্ব বিভাগের কাছে তথ্য আছে। আদালতে গিয়ে রেভিনিউ অফিসার বলবেন, মাই লর্ড, উনি জিরো রিটার্ন দিয়েছেন, কিন্তু ব্যাংকে তাঁর এফডিআর আছে। এই হলো তাঁর ডকুমেন্ট। সুতরাং মিথ্যা হলফের জন্য সব দেশে আইন আছে, আমাদের দেশেও আছে যে পাঁচ বছরের জেল,” ব্যাখ্যা করেন তিনি।

করদাতার দায় ও দায়িত্ব
চেয়ারম্যান সকলকে, বিশেষ করে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তথ্যটি ছড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন যে, দোকানে বসে বা অন্য কারও মাধ্যমে ‘জিরো রিটার্ন’ দেওয়া সম্পূর্ণ বিপজ্জনক। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, করদাতা এই দায় এড়াতে পারবেন না। যদি কেউ তাঁর ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে দিয়েও দেন, তবুও তিনি দায়মুক্ত হবেন না। কারণ অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার সময় করদাতাকেই ঘোষণা করতে হয় যে, দেওয়া সমস্ত তথ্য সত্য।

রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসা উন্নয়নে গুরুত্ব
মো. আবদুর রহমান খান দেশের রাজস্ব আয়ের স্বল্পতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, কর দিয়ে কেউ দরিদ্র হয় না, কিন্তু পেনাল্টি এবং জরিমানা দিয়ে অনেকে দেউলিয়া হয়ে যায়। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিকরাও জানেন না যে তাঁদের কর্মচারীরা অতিরিক্ত করের একটি বড় আকারের ভুল তথ্য দাখিল করেছেন। রাজস্ব কর্মকর্তাদের লক্ষ্য হলো ব্যবসাগুলোর উন্নতি নিশ্চিত করা, যাতে তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকে কর আদায় করা যায়। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, বড় আকারের কর ফাঁকিবাজদের ধরতে এনবিআরের গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও কড়া এনফোর্সমেন্ট দেখা যেতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button