বঙ্গবন্ধুকে সুরক্ষা দিতে না পারা বাঙালির চিরকালের লজ্জা: আ স ম রবের স্মৃতিচারণ

আ স ম রব, সভাপতি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি
১৫ আগস্টের শোকাবহ দিনকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিজের অজস্র স্মৃতি এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের উত্থান-পতনের কথা স্মরণ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম রব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সুরক্ষা দিতে না পারার ব্যর্থতা বাঙালি জাতির জন্য এক চিরস্থায়ী লজ্জা এবং এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র জেনেও তৎকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছিল এক বড় ট্র্যাজেডি।
ইতিহাসের নির্মাতা বঙ্গবন্ধু
আ স ম রব তার লেখায় বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হবে। একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে তাঁর নীতি ও কৌশল ছিল উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল। তিনি বলেন, “জাতির উত্থান-পতনে বঙ্গবন্ধু এমনভাবে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন যে, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তাঁকে কেন্দ্র করেই প্রবাসী সরকার গঠিত হয় এবং তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।” রব বঙ্গবন্ধুকে ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ভিয়েতনামের হো চি মিন বা দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধুও নিজের জীবদ্দশাতেই ইতিহাসের মূর্তপ্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
সুরক্ষা দেওয়ার ব্যর্থতা: এক ট্র্যাজিক অধ্যায়
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আ স ম রব গভীর বেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই দিবসকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্মৃতিচারণ করার কোনো আত্মিক শক্তি আমি পাই না। বাঙালির চিরকালের লজ্জা যে, জাতি হিসেবে আমরা বঙ্গবন্ধুকে সুরক্ষা দিতে পারিনি।” তিনি আরও বলেন, “ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরও তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিন্দুমাত্র উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এটাই বড় ট্র্যাজিডি। এর জন্য তৎকালীন সরকার বা দলের কাউকে আজ পর্যন্ত অনুতপ্ত হতেও দেখিনি।”
ব্যক্তিগত স্মৃতি: মতপার্থক্য ও সেই শেষ ফোনালাপ
রব বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে দুই পর্বে ভাগ করেন—স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার এবং স্বাধীন বাংলাদেশ আমলের। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর ভিপি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর অসংখ্য স্মৃতি থাকলেও স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়।
তবে রাজনৈতিক বিরোধ সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর স্নেহ ও আন্তরিকতার এক poignant স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি। ১৯৭৩ সালে গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন এক রাতের ঘটনা স্মরণ করে তিনি লেখেন:
“রাতে হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে নার্স এসে বললেন, ‘স্যার, গণভবন থেকে আপনার জন্য টেলিফোন এসেছে।’…ওপাশ থেকে ভেসে এলো বঙ্গবন্ধুর সেই ভরাট দরদি কণ্ঠ, ‘রব, এখন কেমন আছ? আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তোমার সুচিকিৎসার জন্য বলে দিয়েছি।’…সেদিনের সেই কথাই ছিল শেষ কথা। আর কোনো দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা হয়নি। কিন্তু আমার কানে এখনো ধ্বনিত হয় বঙ্গবন্ধুর সেই আন্তরিকতা মিশ্রিত কণ্ঠ: ‘রব…’।”
না বলা কথা ও আজকের বাস্তবতা
প্রবন্ধের শেষে আ স ম রব গভীর আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, আজ তাঁর ভীষণভাবে মনে হয়, আরেকবার যদি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হতো, তবে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শ, তাঁর হত্যাকাণ্ডে নিজ দলের ভূমিকা এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন ও আজকের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতেন। তিনি বলেন, “কীভাবে আমরা ভুল রাজনীতি ও ক্ষমতার অতি লোভে স্বাধীনতার লক্ষ্য ও স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি, তা নিয়ে কথা বলতাম।”



