ব্যবসার পণ্য থেকে সোনার অলংকার: যাকাতের খুঁটিনাটি বিধান কী? হাদিসের আলোকে জানুন

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক:
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এবং আর্থিক ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কোন সম্পদে, কী পরিমাণে এবং কখন যাকাত দিতে হবে—এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিসে। ইসলামের বিধান পালনে কুরআনের পাশাপাশি হাদিস কেন অপরিহার্য এবং যাকাত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান নিচে তুলে ধরা হলো।
যাকাতের বিস্তারিত বিধান: হাদিস কেন অপরিহার্য?
অনেক সময় মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কিছু বিধানের উৎস সরাসরি কুরআনে উল্লেখ নেই কেন? এমন একটি প্রশ্নের চমৎকার উত্তর পাওয়া যায় সাহাবী ইমরান ইবন হুসাইন (রা.)-এর একটি বর্ণনায়।
এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, হাদিসে এমন অনেক বিষয় পাওয়া যায় যার সরাসরি ভিত্তি কুরআনে খুঁজে পাওয়া যায় না, যেমন—চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম যাকাত। উত্তরে ইমরান (রা.) তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ছাগল, উট বা সম্পদের যাকাতের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কি কুরআনে উল্লেখ আছে? লোকটি ‘না’ বললে তিনি स्पष्ट করেন যে, এই সমস্ত বিস্তারিত নিয়ম মুসলমানরা নবী (সা.)-এর মাধ্যমে পেয়েছেন, আর সাহাবীরা তা সরাসরি রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে শিখেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬১)
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, যাকাতের মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান সঠিকভাবে পালনের জন্য হাদিসের অনুসরণ অপরিহার্য।
ব্যবসার পণ্যের উপর যাকাত
ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা পণ্যের উপর যাকাত দিতে হবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। এই বিধানটি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত সামুরা ইবন জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পণ্যের যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।” (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬২)
সুতরাং, ব্যবসায়িক পণ্য যদি যাকাতের নিসাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর মালিকানায় থাকে, তবে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।
স্বর্ণালংকারের যাকাত না দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি
নারীদের ব্যবহৃত সোনার অলংকারের উপর যাকাত দিতে হবে কি না, এটি একটি বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন। এ বিষয়ে অবহেলা করার পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।
একবার এক মহিলা তাঁর কন্যাকে নিয়ে রাসূল (সা.)-এর কাছে আসেন, যার হাতে দুটি মোটা সোনার কাঁকন ছিল। নবী (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এর যাকাত দেন কি না। মহিলাটি ‘না’ সূচক উত্তর দিলে রাসূল (সা.) বলেন:
“তুমি কি পছন্দ করবে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের কাঁকন পরিয়ে দিন?”
এই সতর্কবাণী শোনার সাথে সাথে মহিলাটি কাঁকন দুটি খুলে নবী (সা.)-এর সামনে রেখে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য উৎসর্গ করে দেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬৩)
‘কানয’ বা পুঞ্জীভূত সম্পদ কী?
কুরআনে ‘কানয’ বা পুঞ্জীভূত সম্পদ জমা করার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন সম্পদ ‘কানয’ হিসেবে গণ্য হবে? উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রা.)-এর একটি হাদিস থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
তিনি রাসূল (সা.)-কে তাঁর ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যে, এগুলো ‘কানয’ বলে গণ্য হবে কি না। জবাবে নবী (সা.) বলেন:
“যে সম্পদ যাকাতের নিসাব পরিমাণ পৌঁছে এবং তার যাকাত আদায় করা হয়, তা ‘কানয’ নয়।” (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬৪)
এ থেকে বোঝা যায়, যে সম্পদের যাকাত নিয়মিত আদায় করা হয়, তা যত বেশিই হোক, ইসলামের দৃষ্টিতে তা নিন্দনীয় পুঞ্জীভূত সম্পদ বা ‘কানয’ নয়। বরং যাকাত না দেওয়া সম্পদই ‘কানয’ হিসেবে গণ্য, যার জন্য পরকালে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।



