জাতীয়

মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমানসহ পরিচালকদের পলায়ন পর্ষদ ভেংগে দেয়ার দাবী

এম. এইচ.খানঃ ৫ আগষ্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর চতুর্থ প্রজম্মের মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমানসহ পরিচালকদের ২ জন ছাড়া পরিচালনা পর্ষদের সকল পরিচালক পলায়ন করেছে বলে জানা গেছে। পলাযন না করা এই দুইজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ। পলায়নরত পরিচালকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার সহ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচারের। একযোগে পরিচালনা পর্ষদের প্রায় সব পরিচালক পলায়ন করায় ব্যাংকটির স্বাভাবিক সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির এ অবস্খা থেকে উত্তরনের জন্য পলাতক আশিকুর রহমান গংদের পর্ষদ ভেংগে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়ার জন্য জোড় দাবী জানিয়েছেন অর্থ খাতের সংশ্লিষ্ট  অনেকে। জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে আব্দুল হালিম সেলিম এর নেতৃত্বে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। চুড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগ পযর্ন্ত এইচ এন আশিকুর রহমানের কোন ভূমিকা ছিলো না বলে জানান একাধিক উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডার। ব্যাংকটি অনুমোদন লাভের পর আ. লীগের ক্যাশিয়ার ও সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের নজর পরে সদ্য অনুমোদন পাওয়া মেঘনা ব্যাংকের উপর। উদ্যোক্তা পরিচালকদের অনুরোধ করেন তাকে ব্যাংকটিতে একবারের জন্য চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করার জন্য। তার বয়স ও সম্মান বিবেচনা করে সহমর্মিতার অংশ হিসেবে উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডাররা তার এ প্রস্তাব মেনে নিয়ে  প্রথম পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। এক টার্মের জন্য চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন সরকার দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে দীর্ঘ বারো বছর মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ দখল করে নিজের মন মতো ব্যাংকটিতে হেন কোন অপকর্ম নেই যা করেন নি। দীর্ঘ এক যুগ পূর্বে  যাদের শ্রম ও অর্থে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় সে সকল উদ্যোক্তারা তার ক্ষমতার দাপটে কেউ কোন  টু শব্দ করারও সাহস পায়নি । বরং বহু ত্যাগ স্বীকার করে ব্যাংকটি যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যাদেরকে অনুরোধ করে এইচ. এন আশিকুর রহমান এক টার্মের চেয়ারম্যান হয়েছেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেই উদ্যোক্তাদের এক এক করে বের করে দিয়ে নিজের স্ত্রী-সন্তানদের ও চট্রগ্রামের প্রভাবশালী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান বাবুর আত্মীয় স্বজনদের পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এইচ এন আশিকুর রহমান বিশাল অংকের সুবিধা নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

ক্ষমতাচ্যুত আ. লীগের ক্যাশিয়ার এইচ এন আশিকুর রহমান ব্যাংকটির প্রাক প্রতিষ্ঠাকালীন কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না। এমনকি ২০০৮ সালে  প্রদত্ত নির্বাচনী হলফ নামা অনুযায়ী  তার এবং তার পরিবারের কারোর একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার মতো সম্পদও ছিলো না। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর আশিকুর রহমান চেয়ারম্যান হয়ে ৪৩ কোটি টাকা ব্যায় করে তার পরিবারের সদস্যদের কিভাবে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিলেন এবং মাত্র পাচ বছরে এই বিশাল অংকের টাকা কোথায় পেলেন এই নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। 

আশিকুর রহমান দীর্ঘ দিন  আ. লীগের ক্যাশিয়ার পদে বহাল ছিলেন এবং পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও রাজনৈতিক ক্যাশিয়ার পদেও  ছিলেন।ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা তার মাধ্যমে আদায় হতো বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। এইচ এন আশিকুর রহমান মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আ.লীগের ক্যাশিয়ার হওয়ার সুবাদে দেশের যে সকল ব্যবসায়ী বিদেশে ব্যবসা-বানিজ্যের সাথে জড়িত তাদের অনেকের সাথে ছিল নিবির সম্পর্ক।

এ সকল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নিজের, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে তার প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইইজ্জামের সেলক্ট করা মেঘনা ব্যাংকের কয়েকজন পকিচালক।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে এইচ এন আশিকুর রহমানের সাথে চট্রগ্রাম ভিত্তিক এ সকল ব্যবসায়ির টাকা পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান করে হলে “কেচো খুড়তে ভয়ংন্কর অজগর” বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

জানা যায়, মেঘনা ব্যাংক পিএলসিতে আশিকুর রহমানের ইচ্ছা, আকাঙ্খা বা কথাই ছিলো আইন। গত ৫ আগষ্টে পট পরিবর্তন পর্যন্ত এর বাইরে কেউ কোন চিন্তাও করতে পারেন নি।

ক্ষমতার একচ্ছত্র দাপটে তিনি হয়ে উঠেন এক অপ্রতিরোধ্য দানবে। সে সুযোগে তিনি চালিয়েছেন নিয়োগ বানিজ্য ও ঋন অনুমোদন ক্ষেত্রে  চালিয়ে যান অনিয়ম, জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা। দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে  সিএসআরের টাকা ব্যয় করেছেন নিজের ইচ্ছা মতো। ফলে ব্যাংকটি বিগত বারো বছরে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারেনি। তার ইচ্ছামত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ম্যানেজারদের যখন তখন চাকুরীচ্যুত করে বের করে দেয়া ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ২০১৭ সালে তার পছন্দমত বেনামী ঋণ না দেওয়ায় ব্যাংকের তৎকালীন ব্যাংক পাড়ায় এমডিদের এমডি খ্যাত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যান্য উচ্ছপদস্থ কর্মকর্তাদেরকে ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য করেন। একজন দক্ষ এমডি এবং কয়েকজন দক্ষ পদস্থ কর্মকর্তাকে একযোগে বের করে দেয়ায় ব্যাংক স্বাভাবিক অগ্রগতির যে গতি ছিল তা হারিয়ে ফেলে এবং এ কারনে ব্যাংকটি কাংখিত লক্ষ্যে আর পৌঁছতে পারেনি বলে মনে করছেন অনেকে।

ব্যাংকটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন এইচ এন আশিকুর রহমান, ইমরান জামান চৌধুরী, মোহাম্মাদ মামুন সালাম, তানভীর আহমেদ, এস এম জাহাঙ্গীর আলম মানিক, নূরুন ফাতিমা, উজমা চৌধুরী, তারানা আহমদ, ডা. জাহরা রসুল, ইশমাম রাইদা রহমান, মো. মাহমুদুল আলম, জাবেদ কায়সার অলি, ড. অধ্যাপক মো. জুনায়েদ শফিক, আবু হায়দার চৌধুরী, মো. আহসান উল্লাহ, মো. মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী।

এসকল শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বাকী সকলে সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আত্মীয় স্বজন। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আত্মীয় স্বজনদের কয়েকজনের মাধ্যমে এইচ এন আশিকুর রহমান আ. লীগের ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিরাপদে টাকা বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও  অভিযোগ করেছেন অনেকে।

এদিকে, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামায় এইচ এন আশিকুর রহমান নিজের আয়ের উৎস দেখিয়েছেন ব্যবসা, কৃষি ও চাকরি; যা থেকে বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। কৃষিতে বার্ষিক আয় ৩৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় ৬ লাখ টাকা আর চাকরির বেতন-ভাতাদি মিলে ৩ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যাংকে ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।অবশ্য তার চেয়ে তার স্ত্রীর বেশি সম্পদ বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) জমা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন কোম্পানিতে তার নিজের নামে শেয়ার ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর নামে ছিল ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকার।

এ ছাড়া যানবাহন ছিল ৮০ লাখ টাকার।শুধু তাই নয়, তিনি ঋণগ্রস্তও ছিলেন। পূবালী ব্যাংকে তার ঋণ ছিল ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ২৯২ টাকা।মাত্র ৫ বছর পরেই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তিনি তো আর ঋণগ্রস্ত নেই-ই, সারা দেশের মানুষকেই ঋণ দেন। নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক! নাম মেঘনা ব্যাংক। এই ব্যাংকে আছে তার স্ত্রী, দুই পুত্র আর এক কন্যার শেয়ারও।অত্যন্ত ‘সফল’ এই ব্যক্তির নাম এইচ এন আশিকুর রহমান। তিনি রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবং মেঘনা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ। ছেলে রাশেক রহমানও আওয়ামী লীগের নেতা।

ছিলেন কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদকও। আর স্ত্রী রেহানা আশিকুর রহমান মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক। ৯ মে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটির শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে আশিকুর রহমান ও তার স্ত্রী ছাড়াও আছেন দুই ছেলে রাশেক রহমান ও শারেক রহমান এবং মেয়ে ইশমাম রাইদা রহমান। মেঘনা ব্যাংকে শুধু আশিকুর রহমান এবং তার স্ত্রীর বিনিয়োগই ১৭ কোটি টাকা।পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মিলে শুধু মেঘনা ব্যাংকে তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪৩ কোটি টাকা।

২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর আশিকুর রহমানের জমা দেওয়া আরেক হলফনামার তথ্যমতে, তার নিজের নামে ২টি বিলাসবহুল গাড়ি আছে; মূল্য তার হিসাবেই ১ কোটি টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৩টি গাড়ি, মূল্য তার দেওয়া হিসাবে ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর ব্যাংকে নিজের নামে জমা আছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ও স্ত্রীর নামে জমা আছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।এ ছাড়া এই হলফনামায় আশিকুর রহমানের কোনো ব্যাংক ঋণ নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আশিকুর রহমান তার ক্ষমতার দাপট ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিস থেকে তাঁর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গোল্ড ব্রিকস এর নামে বেনামী ঋণ গ্রহণ করেন। যাহা আজ প্রায় ২০ বছর খেলাপি রহিয়াছে। তার একমাত্র মেয়ে সেই কোম্পানির পরিচালক।

এছাড়াও আশিকুর রহমান এর  নামে তেজগায় শিল্প এলাকায় রয়েছে একটি প্লট যার বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্লটটি নাভানার সিএনজি এর নিকট ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button