সংগৃহীত সংবাদ

প্লটের নামে হাজার কোটি টাকা লোপাট: বেস্টওয়ে গ্রুপের বিরুদ্ধে যুগব্যাপী প্রতারণার অভিযোগ

আবাসন খাতের নামে সাধারণ মানুষের স্বপ্নকে পুঁজি করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে ‘বেস্টওয়ে ল্যান্ড অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড’ এবং এর স্বত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গ্রাহকদের প্লট বুঝিয়ে না দেওয়া, অর্থ ফেরত না দেওয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক ভূমি দখলের মতো গুরুতর সব অভিযোগ উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা যায়, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করলেও বাস্তবে বেস্টওয়ের অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। প্লটের জায়গায় এখন কেবলই ঘাস আর জঙ্গলে ভরা মাঠ, যা হাজার হাজার গ্রাহকের স্বপ্নভঙ্গের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রাজধানীর পূর্বাচলকে ঘিরে ‘আধুনিক শহর’ গড়ার লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে মাঠে নেমেছিল বেস্টওয়ে গ্রুপ। ‘পূর্বাচল বেস্টওয়ে সিটি’ এবং ‘ফেয়ারি ল্যান্ড’-এর মতো প্রকল্পে হাজার হাজার গ্রাহক তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও প্লট বুঝে পাননি কেউই।

ভুক্তভোগী খন্দকার নাজমুল আলম বলেন, ২০১০ সালে তিনি ৩ কাঠার একটি প্লট বুকিং দিয়ে ৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্লট বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয় বেস্টওয়ে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে কোম্পানির পক্ষ থেকে আজ-নয়-কাল বলে ঘোরানো হয় এবং এক পর্যায়ে তাকে হুমকিও দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার পাঠানো লিগ্যাল নোটিশও গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

আরেক ভুক্তভোগীর কথায়, “মিজান একজন প্রতারক। টাকার জন্য তার কাছে গেলে তিনি নামাজের ভান করে এড়িয়ে যান।”

জোরপূর্বক ভূমি দখল ও রাজনৈতিক দাপট

শুধু গ্রাহক প্রতারণাই নয়, বেস্টওয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় অসহায় মানুষদের জমিও জোর করে দখলের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবহার করে অনেককে নামমাত্র মূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়, অনেককে আবার কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফসলি জমিতে জোর করে বালু ফেলে ভরাট করে সাধারণ মানুষকে অসহায় করে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

নিবন্ধন বাতিল, তবু থামেনি কার্যক্রম

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বেস্টওয়ে ল্যান্ড অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেডসহ ৩৬টি আবাসন কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করেছে এবং এসব প্রকল্পে প্লট বা ফ্ল্যাট না কেনার জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করেছে। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ভূমি দখল ও প্রতারণার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের আদালতেও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এতকিছুর পরেও রাজধানীর বনানীতে বেস্টওয়ের করপোরেট অফিস এখনও বহাল তবিয়তে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে সেখানকার কর্মকর্তারা কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে রাজি হননি।

ভুক্তভোগীরা এক যুগ ধরে তাদের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের একটাই দাবি, সরকার ও প্রশাসন যেন এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তাদের অর্থ ফেরত পেতে সহায়তা করে।

কৃতজ্ঞতা ও তথ্যসূত্র

এই বিস্তারিত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে “বাংলা এডিশন” কর্তৃক প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন থেকে তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের এই সাহসী ও জনস্বার্থমূলক সাংবাদিকতার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মূল প্রতিবেদনটি দেখার মাধ্যমে পাঠকরা এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button