ডেস্ক রিপোর্ট:
টাকা ছাড়া মেলে না সেবা, দালাল ছাড়া নড়ে না ফাইল। দিনের পর দিন ঘুরেও সমাধান না পেয়ে অবশেষে ঘুষ দিতেই বাধ্য হন সাধারণ মানুষ। এই চিত্র সাভারের আমিনবাজার রাজস্ব সার্কেলের অধীন কান্দি বলিয়ারপুর ভূমি অফিসের। অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থীদের জিম্মি করে দুর্নীতির এক স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
টাকা ছাড়া নড়ে না ফাইল
সরেজমিনে আমিনবাজারের কান্দি বলিয়ারপুর ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কাজে আসা সেবা প্রার্থীরা চরম হতাশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এই অফিসে কোনো কাজের জন্য গেলেই দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়। দালালদের মাধ্যমে নির্ধারিত অঙ্কের টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরেও কোনো কাজ হয় না। তারা আরও জানান, ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না, কারণ এতে ভবিষ্যতে নিজেদের জমির কাগজপত্রে আরও বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করেন।
‘ভুল’ প্রতিবেদনের ফাঁদ: যেভাবে চলে দুর্নীতি
ভুক্তভোগীরা জানান, দুর্নীতির একটি অভিনব কৌশল এখানে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে নামজারি বা খারিজের আবেদনের ক্ষেত্রে কেউ যদি নিয়ম মেনে সরাসরি আবেদন করেন এবং ঘুষ না দেন, তখন এই ভূমি অফিস থেকে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। যেমন—জমির দাগ নম্বর ভুল লেখা বা হোল্ডিং নম্বর নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
এই ভুল প্রতিবেদনের কারণে এসিল্যান্ড অফিস থেকে আবেদনটি সরাসরি বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর ভুক্তভোগী যখন পুনরায় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করেন, তখন তাকে দালালদের মাধ্যমে ‘স্যারকে খুশি’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে সেবা প্রার্থীরা তখন ঘুষ দিতে বাধ্য হন।
এক দশকেও বহাল তবিয়তে অভিযুক্ত কর্মকর্তা
অভিযুক্ত সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাল থেকে এই অফিসে কর্মরত আছেন। দীর্ঘ এক দশক ধরে একই কর্মস্থলে থেকে তিনি একটি শক্তিশালী দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ সেবা প্রার্থীদের। তার এই দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ শুধু আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, সময়মতো জমির কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সাধারণ জনগণ এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।



