হাশরের ময়দানে আরশের ছায়ায় থাকবেন যে ৭ শ্রেণির মানুষ

ইসলামিক ডেস্ক
বিচার দিবসের সেই কঠিন দিনে, যখন সূর্য মাথার अगदी কাছে চলে আসবে এবং মানুষ অসহনীয় গরমে ঘামতে থাকবে, তখন কোনো ছায়া বা আশ্রয় থাকবে না। কিন্তু সেই ভয়াবহ মুহূর্তেও সাত শ্রেণির সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আল্লাহর আরশের বিশেষ ছায়ায় আশ্রয় পাবেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই সুসংবাদ দিয়েছেন, যা মুসলমানদের জন্য আশা ও অনুপ্রেরণার এক অসামান্য উৎস।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এই বিখ্যাত হাদিসটি ইসলামের অন্যতম বিশুদ্ধ গ্রন্থ সহিহ বুখারি ও মুসলিমে স্থান পেয়েছে। আসুন জেনে নিই, কারা সেই সৌভাগ্যবান সাত শ্রেণির মানুষ।
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক
শাসক বা নেতার হাতে থাকে অসীম ক্ষমতা, যা তাকে সহজেই পথভ্রষ্ট করতে পারে। কিন্তু যে শাসক সব লোভ ও অন্যায়ের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেন, তিনি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তার এই কঠিন সাধনার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তাকে হাশরের ময়দানে তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।
২. ইবাদতে নিমগ্ন যুবক
যৌবনকাল মানুষের জীবনের সবচেয়ে উচ্ছল এবং প্রলোভনময় সময়। এই সময়ে দুনিয়ার নানা আকর্ষণ উপেক্ষা করে যে যুবক বা যুবতী আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখে, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। যৌবনের শক্তি ও সময়কে আল্লাহর পথে ব্যয় করার প্রতিদানস্বরূপ তিনি এই বিশেষ সম্মান লাভ করবেন।
৩. যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত
মসজিদ আল্লাহর ঘর এবং ইবাদতের কেন্দ্র। যে ব্যক্তির মন সর্বদা মসজিদের দিকে ঝুঁকে থাকে, এক ওয়াক্ত নামাজ শেষ করে পরের ওয়াক্তের জন্য যিনি অপেক্ষায় থাকেন, তার এই আধ্যাত্মিক ব্যাকুলতাকে আল্লাহ পুরস্কৃত করবেন। মসজিদের প্রতি এই ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসারই পরিচায়ক।
৪. আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসাকারী
দুনিয়ার কোনো স্বার্থ বা লাভের জন্য নয়, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যারা একে অপরকে ভালোবাসে, তাদের সম্পর্ক আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এই ধরনের সম্পর্ক স্থাপনকারী দুজন ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্যই একত্রিত হয় এবং তাঁর জন্যই প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন হয়, তারাও আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে।
৫. পাপের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া ব্যক্তি
যখন কোনো সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী নারী কোনো পুরুষকে একান্তে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য আহ্বান করে, তখন কেবল খাঁটি ঈমানদার ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিই সেই প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’—এই একটি বাক্যই তার তাকওয়া বা আল্লাহভীতির প্রমাণ। নিজের চরিত্রকে এভাবে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাকে এই মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন।
৬. গোপনে দানকারী
দান-সদকা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ লোকদেখানো বা প্রশংসার আশা ছাড়া শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এত গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কী দান করল, বাম হাতও তা টের পায় না—তার এই ইখলাস বা একনিষ্ঠতা আল্লাহকে এতটাই মুগ্ধ করে যে, তিনি এর প্রতিদানস্বরূপ তাকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন।
৭. নির্জনে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী
মানুষের ভিড়ে নয়, বরং নির্জনে একাকী বসে যে ব্যক্তি আল্লাহর বড়ত্ব, তাঁর মহিমা স্মরণ করে এবং নিজের গুনাহের কথা ভেবে অনুতপ্ত হয়ে চোখের পানি ফেলে, তার এই অশ্রু আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা খাঁটি ঈমানের লক্ষণ, আর এর প্রতিদানও তেমনই বিশেষ।
এই হাদিসটি মুমিনদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানের নির্দেশিকা। এখানে বর্ণিত সাতটি গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে একজন মুমিন কেবল পরকালীন মুক্তিই নয়, দুনিয়াতেও একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে পারে।



