Uncategorizedবাংলাদেশ

নগরীর বুকে এক চিলতে স্বস্তি: রিকশার বিকল্পে পরিবেশবান্ধব শাটল সার্ভিসের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

বিশেষ প্রতিবেদন

ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পিত আবাসিক এলাকাগুলোর একটি সাধারণ চিত্র হলো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রিকশার ওপর প্রায় শতভাগ নির্ভরশীলতা। এই নির্ভরতার সুযোগে জন্ম নেয় ভাড়ার নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি এবং অনিরাপদ যাতায়াতের মতো নানা ভোগান্তি। এই চিরাচরিত সমস্যা থেকে উত্তরণের একটি আধুনিক ও কার্যকর সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক শাটল সার্ভিস, যা সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েই এর উপযোগিতা প্রমাণ করেছে।

ভাড়ার নৈরাজ্য থেকে মুক্তি: আর্থিক স্বস্তি

এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎক্ষণিক এবং দৃশ্যমান সুবিধা হলো আর্থিক সাশ্রয়। রিকশার ক্ষেত্রে যেখানে নির্দিষ্ট কোনো ভাড়ার তালিকা নেই এবং চালকের ইচ্ছাই अंतिम, সেখানে শাটল সার্ভিস একটি নির্দিষ্ট ও সাশ্রয়ী ভাড়ার কাঠামোয় পরিচালিত হয়। সংক্ষিপ্ত দূরত্বের জন্য যেখানে রিকশা অনায়াসে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাবি করে, সেখানে এই শাটল মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকায় সেবা দিচ্ছে। এটি দৈনন্দিন যাত্রী, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অফিসগামী এবং গৃহিণীদের মাসিক যাতায়াত খরচকে বহুলাংশে কমিয়ে আনে। এর ফলে একটি এলাকার বাসিন্দাদের ওপর থেকে যাতায়াতের আর্থিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য: যাতায়াতে নতুন মাত্রা

রিকশার তুলনায় এই বৈদ্যুতিক শাটলগুলো নিঃসন্দেহে অনেক বেশি নিরাপদ। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক বাহন। একসঙ্গে ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী यात्रा করতে পারায় বিচ্ছিন্নভাবে একা যাতায়াতের ঝুঁকি কমে আসে। খোলা কিন্তু কাঠামোবদ্ধ হওয়ায় এটি যেমন আরামদায়ক, তেমনই আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন থেকেও যাত্রীদের সুরক্ষা দেয়। এর নির্দিষ্ট রুট এবং পরিকল্পিত চলাচল যাতায়াতে এক ধরনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে, যা বিশৃঙ্খল রিকশা চলাচলের ভিড়ে প্রায় অসম্ভব ছিল।

পরিবেশবান্ধব সমাধান: ভবিষ্যতের পথে এক ধাপ

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং নগর দূষণের এই যুগে পরিবেশবান্ধব পরিবহন একটি অপরিহার্য চাহিদা। ব্যাটারিচালিত হওয়ায় এই শাটলগুলো সম্পূর্ণ শব্দহীন এবং কার্বন নিঃসরণমুক্ত। এগুলো একদিকে যেমন শব্দদূষণ রোধ করে এলাকার শান্ত পরিবেশ বজায় রাখে, তেমনই বায়ুদূষণ না করায় নগরীর পরিবেশ সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এই উদ্যোগকে একটি টেকসই নগর পরিবহন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

একটি মডেলের সম্ভাবনা: দেশজুড়ে অনুকরণের সুযোগ

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চালু হওয়া এই সেবা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নয়, বরং এটি সমগ্র দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল। ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডিসহ অন্যান্য পরিকল্পিত এলাকা এবং চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতেও এই মডেল সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন রিকশার ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমবে, তেমনই অভ্যন্তরীণ পরিবহনে একটি সুশৃঙ্খল, সাশ্রয়ী এবং আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

উপসংহার:
বৈদ্যুতিক শাটল সার্ভিস শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি একটি এলাকার জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের চাবিকাঠি। এটি আর্থিক সাশ্রয়, নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং আধুনিক নগর পরিকল্পনার এক চমৎকার সমন্বয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা যদি এই মডেলের গুরুত্ব অনুধাবন করে এটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তবে বাংলাদেশের নগর পরিবহন ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button