Uncategorizedজাতীয়বাংলাদেশবিশ্লেষণমতামত

ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন: সামাজিক অবক্ষয় রোধে ৫টি জরুরি পদক্ষেপ

মোঃ ইকবাল হোসেন সরদার

স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিভেদ এবং নৈতিক সংকট আমাদের অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সমৃদ্ধ ও টেকসই রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। কিন্তু বেশ কিছু ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ আমাদের সেই ঐক্যকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

১. হারানো বন্ধন পুনরুদ্ধার: সামাজিক ঐক্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা

কিছু দশক আগেও আমাদের সমাজব্যবস্থা দাঁড়িয়ে ছিল পারস্পরিক সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ওপর। গ্রামের যেকোনো অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশ নিত। প্রতিবেশীর বিপদে駆けつけ যাওয়া ছিল অলিখিত নিয়ম। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই আন্তরিক বন্ধন আজ আলগা হয়ে গেছে। সমাজে সহনশীলতা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনতে হলে এই হারানো ঐতিহ্যকে पुनरुज्जीवित করতে হবে। পাড়া-মহল্লায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে তুলতে হবে, যা মানুষকে আবারও এক সুতোয় গাঁথবে।

২. মাদকমুক্ত সমাজ: তরুণ প্রজন্মকে রক্ষার লড়াই

মাদকের ভয়াল থাবা আজ আমাদের তারুণ্যকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এর প্রভাবে পরিবার ভাঙছে, সমাজে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। জাতিকে রক্ষার প্রথম শর্তই হলো তরুণ প্রজন্মকে বাঁচানো। এর জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত পদক্ষেপ। একদিকে যেমন মাদকের সরবরাহ রুখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই অন্যদিকে সামাজিক সচেতনতা তৈরি, পারিবারিক শিক্ষা জোরদার এবং তরুণদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

৩. সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশ: অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পূর্বশর্ত

যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীল এবং নিরাপদ পরিবেশ। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সামাজিক জীবনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও বাধাগ্রস্ত করে। বিনিয়োগকারীরা安心して বিনিয়োগ করতে পারেন না, ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে।

৪. দুর্নীতির মূলোৎপাটন: স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠন

দুর্নীতি নামক অদৃশ্য দৈত্য আমাদের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে উন্নয়নের প্রতিটি প্রকল্পে দুর্নীতির বিস্তার দেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দিচ্ছে না। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান চালু করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করার মাধ্যমেই কেবল একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব।

৫. দক্ষতানির্ভর শিক্ষা: আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের ভিত্তি

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা মূলত সনদনির্ভর ও তত্ত্বকেন্দ্রিক, যা বেকারত্বের হার বাড়াচ্ছে। দেশের বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে হাতে-কলমে বা কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তি, আধুনিক কৃষি, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। বাস্তবমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষাই পারে একটি দক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল প্রজন্ম তৈরি করতে, যারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেষ কথা:
একটি জাতি তখনই শক্তিশালী হয়, যখন তার জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকে। মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মতো শত্রুকে পরাজিত করে এবং সামাজিক সম্প্রীতি ও আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েই বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button