বিআরটিএ-তে দালালদের অভয়ারণ্য, তথ্য নিতে গিয়েই সাংবাদিক আটক
ডেস্ক রিপোর্ট:
গত ১৭ আগস্ট, ২০২৫, রবিবার, দুপুর ১২টার দিকে মোঃ জাকিরুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহের জন্য মিরপুর বিআরটিএ-তে যান। তিনি সেখানকার মালিকানা শাখার ১০১ নম্বর কক্ষে দালাল চক্র ও অন্যান্য অনিয়ম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রবেশ করেন।
এ সময় ১০১ নম্বর কক্ষে পরিদর্শক রাসেল উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক জাকিরুল তার কাছে দালালদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এরপর তিনি দ্বিতীয় তলায় মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন শাখার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) শামসুল কবিরের কক্ষে গিয়ে একই প্রশ্ন করেন এবং নাজমুল নামে এক দালালের নাম উল্লেখ করেন। এ সময় সহকারী পরিচালক শামসুল কবির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমি খুব ব্যস্ত, অন্য কোনোদিন কথা হবে।” এ সময় তিনি উল্টো সাংবাদিককে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে শুরু করেন, যেমন—আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন, কোথায় থাকেন, কী করেন, কতদিন ধরে বিআরটিএ-তে আসছেন ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, “আমি এখানে নাজমুল নামে কাউকে চিনি না।”
সাংবাদিক পরিচালকের কক্ষ থেকে বের হতেই হাবিব নামে এক দালাল তাকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কে? আপনার পরিচয় কী?” সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহের জন্য এসেছেন বলে উত্তর দেন।
এরপর সাংবাদিক জাকিরুল ফিটনেস শাখার ১১০ নম্বর কক্ষে সহকারী পরিচালক শেখ ইমরানের সঙ্গে দালালদের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং তাকে ১২৭ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। সাংবাদিক ১২৭ নম্বর কক্ষে গিয়ে কয়েকজন জুনিয়র কর্মকর্তা এবং দালাল চক্রের উপস্থিতি দেখতে পান।
পরে সাংবাদিক জাকিরুল বিআরটিএ-এর ভেতরের আনসার ক্যাম্পের সামনে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নেওয়ার সময় দুলাল ও হাবিব নামে দুজন দালাল এসে তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং তার পরিচয়পত্র দেখতে চান। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখালেও তারা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাকে অপমান করেন। এ সময় তারা ফোনে আরও কয়েকজন দালালকে ডেকে আনেন এবং বিআরটিএ-তে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের সামনেই তাকে হেনস্তা করতে শুরু করেন।
প্রথমে ১০-১৫ জন দালাল বিআরটিএ-এর ভেতরে এবং পরে গেটের সামনে আনসারদের উপস্থিতিতেই সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেন। এরপর তারা আনসার ক্যাম্পের এক সদস্যের সহযোগিতায় হাজতখানার চাবি নিয়ে সাংবাদিককে সেখানে আটকে রাখেন।
কিছুক্ষণ পর আনসারদের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) সোহেল সাংবাদিককে সেখান থেকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর, বিকেল ৫:৩০ মিনিটে, পিসি সোহেল, সহকারী পিসি শহিদুল এবং দুলাল ও হাবিবসহ একাধিক দালাল সাংবাদিককে আনসারদের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তারা জোরপূর্বক একটি চাঁদাবাজির মুচলেকা লিখিয়ে নিয়ে সাংবাদিককে বিআরটিএ থেকে বের করে দেয়।



