অপরাধদুর্নীতিবাংলাদেশ

মতিউরের পর এবার আলোচনায় দুলাভাই: লন্ডন এক্সপ্রেসে সিন্ডিকেটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাগল-কাণ্ডে অভিযুক্ত মতিউর রহমানের দুলাভাই মোঃ নুরুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে পরিবহন সংস্থা ‘লন্ডন এক্সপ্রেস’ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলার মাধ্যমে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। তবে রহস্যজনকভাবে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তার কোনো বক্তব্য না থাকায় বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম মৃধা ‘জিপি গাড়ি’ চালানোর নামে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিতে কর্মরত চেয়ারম্যানের আত্মীয় এবং মতিউরের সুপারিশে চাকরি পাওয়া কিছু ব্যক্তি এই গাড়ি পরিচালনায় আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। তারা কোম্পানির ড্রাইভার, মেকানিক ও অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মতিউর রহমান কারাগারে থাকলেও তাকে মুক্ত করার জন্য নুরুল ইসলাম মৃধা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে তদবির করে বেড়াচ্ছেন। এই কাজে তাকে আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা করছেন এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মতিউরের আপন ছোট ভাই মোঃ কাইয়ুম হাওলাদার।

একটি সূত্রমতে, মতিউরের অস্বীকৃত দ্বিতীয় স্ত্রী সোনালী পেপার মিলে কর্মরত একজন ক্যাশিয়ারের মেয়ে। কেলেঙ্কারি ঢাকতে নুরুল ইসলাম মৃধার পরামর্শেই মতিউর এই দ্বিতীয় বিয়েটি করেছিলেন বলে জানা যায়।

অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএর সাবেক কর্মকর্তা ও নরসিংদীর নিবাসী মোঃ নুরুল ইসলাম মৃধা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু লন্ডন এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ নুরুল ইসলামকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রভাবিত করে ফেলেন। তিনি বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে কোম্পানির সচিব শাকিবসহ আরও কয়েকজন কর্মচারীকে বিতাড়িত করে প্রতিষ্ঠানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। এমনকি এমডিকে কুপরামর্শ দিয়ে তার ছেলেকেও (যিনি ডিএমডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন) কর্মহীন করে তার কক্ষটি দখল করে নেন মৃধা। বর্তমানে তিনি লন্ডন এক্সপ্রেস ও এর অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মতিউর রহমান প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তার দুলাভাই হিসেবে নুরুল ইসলাম মৃধাও প্রশাসনে অবাধ সুবিধা ভোগ করতেন।

ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত লন্ডন এক্সপ্রেসের বেশ কিছু গাড়ি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট রুটে চলাচল করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের নিজস্ব রক্ষণাবেক্ষণ শেডে রক্ষিত থাকা অবস্থায় বেশ কিছু গাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। সেই সময় কোম্পানির এমডি দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন এবং সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন নুরুল ইসলাম মৃধা। এই ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি সন্দেহজনকভাবে এড়িয়ে যান, যা অনেকের মনে রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, তৎকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বীমার টাকা বা ব্যাংক থেকে নতুন গাড়ি নামানোর নামে আর্থিক সুবিধা নিতেই পরিকল্পিতভাবে গাড়িগুলো পোড়ানো হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

তবে মতিউর রহমানের গ্রেপ্তার এবং সরকারের পটপরিবর্তনের কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে লন্ডন এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, বিগত সময়ে মতিউরের সহযোগিতায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রেসক্লাব শাখা থেকে লন্ডন এক্সপ্রেসের নামে প্রায় ৩০টি গাড়ি নামানোর অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button