Uncategorizedঅপরাধগাজীপুরদুর্নীতিপরিবেশবাংলাদেশ

কোনাবাড়ীতে ৩২৫ কোটি টাকা মূল্যের বনের জমি দখল করে প্রাচীর নির্মাণ, বেকায়দায় ৪০০ পরিবার

ফজলুর রহমান

গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে বন বিভাগের প্রায় ১৭ একর জমি জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী নিউ দেওয়ালিয়াবাড়ি এলাকায় বন বিভাগের এই বিশাল সম্পত্তি দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করায় প্রায় ৪০০ পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। দখলকৃত এই সরকারি বনভূমির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দখল হয়ে যাওয়া এই জমি উদ্ধারে বন বিভাগের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উড়ালসেতু সংলগ্ন নিউ দেওয়ালিয়াবাড়ি এলাকায় প্রবেশের একমাত্র পথটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলায় মানুষের সাধারণ চলাচল সম্ভব হলেও কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে প্রায় ৪০০ পরিবার অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছে।

জানা যায়, কোনাবাড়ীর মিরপুর মৌজার চক্রবর্তী বিটের প্রায় ১৭ একর (৫১ বিঘা) জমির গাছপালা কেটে ওয়াহেদ ১২ একর এবং মোস্তফা কামাল ৫ একর জমি দখলে নেন। মহাসড়কের উত্তর পাশে প্রায় ৫৫০ ফুট দীর্ঘ পথের দুই দিকে প্রাচীর দিয়ে মাত্র ৮ ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা রাখা হয়েছে। বন বিভাগের এই জমিতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন গড়ে তোলা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, মজিদের ছেলে আবু সাঈদের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে সেলিম শেখ নামে এক ব্যক্তি ঝুট কাপড়ের গোডাউন তৈরি করেছেন এবং নিরাপত্তার জন্য মহাসড়কের পাশে ইটের সীমানা প্রাচীর দিয়েছেন। দক্ষিণ পাশের জমিতে প্রাচীর দিয়ে গোডাউন তৈরি করে প্রতি মাসে প্রায় ১৩ লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

বন বিভাগের ১২ একর জমি মজিদের ছেলে ওয়াহিদ ওরফে লিন্টু দখলে রেখেছেন এবং পূর্ব পাশের ৫ একর জমি মোস্তফা কামালের দখলে। তারা প্রাচীরের ভেতরে বাগান তৈরি ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। ওয়াহিদ ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত ডন গার্মেন্টস এবং ৫৫টি ইটভাটার মালিক, যা তার ছোট ভাই পল্টু নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যদিকে, মোস্তফা কামাল ৫ একর জমি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে তার ভেতরে সবজি চাষ করছেন।

প্রায় ৪০০ পরিবারের চলাচলের এই একমাত্র পথটি ২০০৬ সালে মোস্তফা কামাল প্রথম প্রাচীর দিয়ে নির্মাণের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তা ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবারও মজবুত করে প্রাচীর নির্মাণ করেন এবং একই সঙ্গে ওয়াহেদও অপর পাশে প্রাচীর নির্মাণ করেন।

প্রাচীর নির্মাণের সময় এলাকাবাসী চলাচলের রাস্তার দাবিতে বিরোধিতা করলে কামাল স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও প্রাচীর ভাঙার মামলা দায়ের করেন। কামাল ঢাকার উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে বসবাস করেন এবং ভাটারায় ‘স্কলারশিপ স্কুল’ নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা বর্তমানে তার ছেলে জুবায়ের নিয়ন্ত্রণ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে ভূমিহীনরা এই জমিগুলো দখলে নিলে তৎকালীন সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার ও মজিদ মিলে তাদের উচ্ছেদ করেন এবং ৩৬৫টি ঘর ভেঙে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কাটা, চুরি ও ডাকাতির মতো বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়। এছাড়া, দক্ষিণ দিকে বনের জমি উজাড় করে মজিদ একটি ইটভাটা নির্মাণ করেছিলেন, যা ২০১৮ সালে এলাকাটি সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button