চট্টগ্রামে সাংবাদিককে ওসির ধাক্কা, হুঁশিয়ারি— “অনুমতি ছাড়া ভিডিও করা যাবে না”
সাবহেডিং: বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা ও টেলিভিশন ক্যামেরাম্যানকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম নগরীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন টেলিভিশন সাংবাদিককে ধাক্কা দিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের ভিডিও ধারণ করা যাবে না।”
এই ঘটনায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এটিকে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের একটি নগ্ন প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
ঘটনার বিবরণ
সূত্রমতে, আজ চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় একটি ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে যান বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। সংবাদ সংগ্রহের এক পর্যায়ে ‘মুভি বাংলা টিভি’র ক্যামেরাম্যান ভিডিও ধারণ করার সময় বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকস্মিকভাবে তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই ওসি ওই ক্যামেরাম্যানের দিকে তেড়ে যান এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা ঘটনার কারণ জানতে চাইলে ওসি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
ওসির বিতর্কিত ঘোষণা
সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে ওসি ঘোষণা দেন, এখন থেকে তার থানা এলাকায় পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না। তিনি এটিকে সরাসরি নির্দেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই নিয়ম অমান্য করলে তার পরিণতি ভালো হবে না।
ওসির এই ঘোষণাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। তাদের মতে, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এ ধরনের নিয়ম জারি করতে পারেন না, কারণ এটি সংবিধান প্রদত্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, “পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা এবং ভিডিও ধারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর একটি বড় আঘাত।”
এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওসির বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
পুলিশের বক্তব্য
এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি তারা অবগত হয়েছেন এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ।



