ইসলাম ধর্ম

আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি কবর: যে কারণে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতেন খলিফা উসমান (রা.)

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি কবরের চেয়ে অধিক ভয়াবহ কোনো দৃশ্য দেখিনি।’—এই হাদিসটিই ছিল তাঁর কান্নার কারণ।

ইসলামের তৃতীয় খলিফা, ‘জুননুরাইন’ বা দুই নূরের অধিকারী হজরত উসমান (রা.)-এর আল্লাহভীতি ছিল অত্যন্ত গভীর। আখিরাতের চিন্তায় তিনি প্রায়ই মগ্ন থাকতেন, বিশেষ করে কবরের কথা স্মরণ হলে তিনি অঝোরে কাঁদতেন। তাঁর এই কান্না এতটাই মর্মস্পর্শী ছিল যে, সঙ্গীরা এর কারণ জানতে আগ্রহী হন। একটি বিখ্যাত হাদিসে তাঁর এই কান্নার পেছনের কারণ বর্ণিত হয়েছে, যা প্রত্যেক মুমিনের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা।

কেন কবর দেখে এত কান্না?

বর্ণিত আছে, হজরত উসমান (রা.) যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ত এবং এতে তাঁর দাড়ি মোবারক ভিজে যেত। তাঁর এই অবস্থা দেখে একবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো: “আপনি জান্নাত এবং জাহান্নামের কথা স্মরণ করে এতটা কাঁদেন না, যতটা কাঁদেন একটি কবর দেখে। এর পেছনের কারণ কী?”

জবাবে তিনি সেই হাদিসটি শোনালেন, যা তিনি সরাসরি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছ থেকে শুনেছিলেন।

আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি সম্পর্কে রাসুলের (ﷺ) সতর্কবার্তা

হজরত উসমান (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, ‘কবর হলো আখিরাতের সফরের প্রথম ঘাঁটি। যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পেয়ে গেল, তার জন্য পরবর্তী পর্যায়গুলো সহজ হয়ে যাবে। আর যে এখানে মুক্তি পেল না, তার জন্য পরবর্তী পর্যায়গুলো আরও অনেক বেশি কঠিন হবে।’”

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, কবরের জীবনই নির্ধারণ করে দেবে পরকালের বাকি পথ কতটা মসৃণ বা বন্ধুর হবে। এখানেই একজন বান্দার জন্য পুরস্কার বা তিরস্কারের সূচনা হয়।

সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য

উসমান (রা.) তাঁর কান্নার কারণ হিসেবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর আরও একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, “রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি কবরের (আজাবের) দৃশ্যের চেয়ে অধিক ভয়াবহ ও মারাত্মক কোনো দৃশ্য আর দেখিনি।’”

সুবহানাল্লাহ! যে রাসুল (ﷺ) স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেছেন, তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত এই বাণী কবরের ভয়াবহতার গভীরতা নির্দেশ করে। এটিই ছিল হজরত উসমান (রা.)-এর কান্নার মূল কারণ।

এই হাদিসটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং মৃত্যুর পর প্রথম ও সবচেয়ে কঠিন ধাপ হলো কবর। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত কবরের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং এমন আমল করা, যা কবরের জীবনকে শান্তিময় করে তোলে।

হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দিন। আমিন।

(সূত্র: তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ২৩০৮)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button