যেদিন মানুষ নিজের ঘামে হাবুডুবু খাবে: হাশরের ময়দান সম্পর্কে যা জানা জরুরি

কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত সেই মহাদিবস, যেদিন সকল মানুষ একত্রিত হবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে।
ধর্মীয় ডেস্ক:
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আখিরাত বা পরকালের প্রতি ঈমান। আর এই পরকালীন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো ‘হাশরের ময়দান’, যেখানে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে বিচারের জন্য একত্রিত করা হবে। এই দিনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
হাশরের ময়দান কী?
‘হাশর’ শব্দের অর্থ একত্রিত করা বা জমায়েত করা। ইসলামী পরিভাষায়, হাশরের ময়দান হলো সেই বিশাল প্রান্তর, যেখানে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সকল মানবজাতিকে পুনরুত্থিত করে হিসাব-নিকাশের জন্য সমবেত করবেন। এটি এমন এক দিন, যার ভয়াবহতা ও পরিস্থিতি মানুষের কল্পনারও অতীত।
কুরআনের আলোকে হাশরের দিবস
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা এই দিবসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যাতে মানুষ দুনিয়ার জীবনে সতর্ক থাকে। যারা পরকালকে অস্বীকার করে, তাদের উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন:
أَلَا يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوثُونَ ﴿٤﴾ لِيَوْمٍ عَظِيمٍ ﴿٥﴾ يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿٦ ﴾অর্থ: “তারা কি চিন্তা করে না যে, নিশ্চয়ই তারা পুনরুত্থিত হবে—সেই মহাদিবসে, যেদিন মানুষ বিশ্ব প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড়াবে।”— (সূরা আল মুতাফফিফীন, আয়াত: ৪-৬)
এই আয়াতগুলো দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে, পুনরুত্থান ও আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো এক অবশ্যম্ভাবী সত্য।
হাদিসে বর্ণিত হাশরের ময়দানের চিত্র
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বিভিন্ন হাদিসে হাশরের ময়দানের ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন, যেন মুমিনরা সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। এমনই একটি হাদিসে সেই কঠিন মুহূর্তের চিত্র ফুটে উঠেছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদিসে বলা হয়েছে:
يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعٰلَمِيْنَ حَتّٰى يَغِيْبَ أَحَدُهُمْ فِىْ رَشْحِهٖ অর্থ: “মানুষ বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। তখন তারা (প্রচণ্ড উত্তাপে) নিজেদের ঘামে হাবুডুবু খাবে।”— (বুখারী: ৪৯৩৮, মুসলিম: ২৮৬২)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, সেই দিন পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হবে যে, সূর্যের প্রচণ্ড তাপে মানুষ নিজের শরীর থেকে নির্গত ঘামেই ডুবে যেতে থাকবে।
সুতরাং, হাশরের ময়দানের প্রতি বিশ্বাস একজন মুমিনকে কেবল পরকালের কথাই স্মরণ করায় না, বরং দুনিয়ার জীবনে সৎপথে চলতে, অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত থাকতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।



