ইসলাম ধর্ম

যে সূরা পাঠে দারিদ্র্য স্পর্শ করে না: জেনে নিন সূরা ওয়াকিয়ার বিস্ময়কর ফজিলত

রাসূল (ﷺ) এটিকে ‘প্রাচুর্যের সূরা’ বলেছেন; নিয়মিত পাঠে রিযিকের সচ্ছলতা, দুশ্চিন্তা মুক্তি এবং কিয়ামতের দিনে পরিত্রাণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

ধর্মীয় ডেস্ক:

পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরার মধ্যেই মানুষের জন্য রয়েছে বিশেষ নির্দেশনা ও অশেষ কল্যাণ। তবে কিছু সূরার ফজিলত ও তাৎপর্য বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। এমনই একটি মহিমান্বিত সূরা হলো ‘সূরা আল-ওয়াকিয়া’, যা তার পাঠকারীকে অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য থেকে সুরক্ষা দেয় বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসূল (ﷺ)-এর প্রতিশ্রুতি: দারিদ্র্য থেকে মুক্তি

সূরা ওয়াকিয়ার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ফজিলত হলো এটি রিযিকের সচ্ছলতা নিয়ে আসে এবং দারিদ্র্য দূর করে। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে, তার ওপর কখনো দারিদ্র্য আসবে না।”— [বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান]

এই হাদিসের ওপর ভিত্তি করে সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী যুগের আলেমগণ সর্বদা এই সূরাটি পাঠ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। এমনকি হযরত ইবনে মাসঊদ (রা.) নিজে মৃত্যুর আগে তার কন্যাদের এই সূরাটি নিয়মিত পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে অসিয়ত করে গিয়েছিলেন।

কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ

‘আল-ওয়াকিয়া’ শব্দের অর্থ ‘অনিবার্য ঘটনা’, যা দ্বারা কিয়ামতের দিনকে বোঝানো হয়েছে। এই সূরায় কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য, মানুষের চূড়ান্ত শ্রেণিবিন্যাস—অর্থাৎ ডান হাতের দল (জান্নাতি), বাম হাতের দল (জাহান্নামী) এবং অগ্রবর্তী দল (সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী)—বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

আলেমগণ বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নিয়মিত এই সূরা পাঠের মাধ্যমে কিয়ামতের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সেই কঠিন দিনের ভয়াবহতাকে সহজ করে দেবেন এবং তাকে শান্তিতে রাখবেন।

দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক প্রশান্তি

আধুনিক জীবনের অন্যতম বড় সমস্যা হলো মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা ও হতাশা। অনেক ইসলামিক স্কলার ও বুজুর্গের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে নিয়মিত সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করেন, আল্লাহ তাআলা তার অন্তর থেকে দুনিয়াবী চিন্তা ও অভাবের ভয় দূর করে দেন এবং তাকে অনাবিল মানসিক প্রশান্তি দান করেন।

কখন ও কীভাবে পাঠ করবেন?

হাদিস অনুযায়ী, এই সূরাটি “প্রতি রাতে” পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। তাই আলেমগণ মাগরিব বা এশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এটি পাঠ করার পরামর্শ দেন। তবে দিনের অন্য যেকোনো সময় পাঠ করলেও এর সওয়াব পাওয়া যাবে।

সুতরাং, দুনিয়ার অভাব-অনটন থেকে মুক্তি এবং আখিরাতের কঠিন দিনে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় প্রত্যেক মুমিনের উচিত এই মহিমান্বিত সূরাটিকে তার দৈনন্দিন আমলের অংশ করে নেওয়া।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button