Uncategorizedদেশবাংলাদেশমানববন্ধনরংপুর

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে রংপুরে নারীমুক্তি কেন্দ্রের মিছিল ও সমাবেশ

২০২৫, সকাল ১১টায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে একটি মিছিল ও সমাবেশ রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের জেলা সদস্য আলো বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, রংপুর জেলা কমিটির নেতা প্রিয় রানী।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরের ১৪ বছরের কিশোরী ইয়াসমিনকে একদল পুলিশ সদস্য গণধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এর বিরুদ্ধে দিনাজপুরবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেই প্রতিরোধ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৭ জন আন্দোলনকারী বীর জনতা নিহত হন। সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে উঠলে আন্দোলনের মুখে তিন পুলিশ সদস্যের ফাঁসি হয়।

সেই ঘটনার ৩০ বছর কেটে গেলেও আজও দেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি, নারী পায়নি সমানাধিকার। অথচ শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি প্রতিরোধ আন্দোলনে নারী সম্মুখসারিতে থেকে লড়াই করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে। সর্বশেষ ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনে চরম নিপীড়নের মুখে যখন আন্দোলন পিছু হটতে থাকে, নারীরাই তখন এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে এবং বিজয়ী হওয়া পর্যন্ত মাঠে সংগ্রাম করেছে।

কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর নারীদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন পরিস্থিতিতে নারীদেরকেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। পথে-ঘাটে সর্বত্র পোশাকের কথা বলে, পর্দার কথা বলে নারীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব কর্মকাণ্ডের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে জুলাইয়ের চেতনা—ধর্ম, বর্ণ এবং লিঙ্গীয় বৈষম্যমুক্ত, স্বাধীন ও মানবিক সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষার—সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে। এভাবে একটি সভ্য সমাজ গড়ে উঠতে পারে না।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ৯৫-এর নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান একই চেতনার ধারাবাহিকতা। কাঙ্ক্ষিত সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বরাবরের মতো এবারেও ভূলুণ্ঠিত হতে চলেছে। তাই আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।

প্রতিরোধ সংগ্রামের সেই চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র সামনের দিনে যে লড়াই গড়ে তুলবে, সেই লড়াইয়ে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। নিম্নোক্ত দাবিগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

দাবিসমূহ:
১. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, মাদক ও জুয়া বন্ধ করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে নারীদেহের অশ্লীল উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। ইন্টারনেটের সকল পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পর্নো পত্রিকা, সিডি ও বই বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. ক্ষেতে-খামারে, হোটেলসহ বিভিন্ন খাতে শ্রমজীবী নারীদের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করতে হবে। সকল বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৪. ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে এমবিবিএস ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগসহ পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করতে হবে এবং হেলথ কার্ড চালু করতে হবে। গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৫. বাল্যবিবাহ বন্ধে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর বিশেষ বিধান (ধারা-১৯) বাতিল করতে হবে।
৬. পাহাড় ও সমতলের নারী-শিশু নির্যাতনকারী, ধর্ষক ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৭. জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করতে হবে এবং শ্রমজীবী নারীদের ন্যায়সঙ্গত সকল দাবি মেনে নিতে হবে।
৮. মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মীয় কুসংস্কার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্যে নারীর প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বন্ধ করতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার নির্মাণ ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৯. সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু এবং সিডও (CEDAW) সনদের পূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।


Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button