ইসলাম ধর্ম

আপনিও হতে পারেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা: কোরআনে বর্ণিত ৭টি বিশেষ গুণ

তওবা থেকে শুরু করে সবর—পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নিজেই জানিয়েছেন কোন গুণগুলো তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। এই গুণগুলো অর্জন করে আপনিও হতে পারেন তার প্রিয়ভাজন।

ইসলামিক ডেস্ক:

প্রত্যেক মুমিনেরই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন করা। কিন্তু কীভাবে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া যায়? কোন গুণগুলো ধারণ করলে তিনি আমাদের ভালোবাসবেন? এর উত্তর স্বয়ং আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন।

আসুন, কোরআনের আলোকে এমন ৭টি গুণের কথা জেনে নিই, যা আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে পছন্দ করেন এবং যা অর্জনের মাধ্যমে আমরা তার নৈকট্য লাভ করতে পারি।

১. তওবা বা অনুশোচনা
ভুল করা মানুষের স্বভাব। কিন্তু ভুলের পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসাই হলো মুমিনের পরিচয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের অত্যন্ত ভালোবাসেন, যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে আন্তরিকভাবে তওবা করে। কোরআনে বলা হয়েছে:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা: ২২২)

২. তাহারাত বা পবিত্রতা
ইসলামে পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। শারীরিক پاکیزگی (যেমন: অজু, গোসল) এবং আত্মিক পবিত্রতা (যেমন: শিরক, হিংসা ও অহংকার থেকে মুক্ত থাকা)—উভয়ই আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। আল্লাহ বলেন:

“এবং যারা পবিত্র থাকে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা: ২২২)

৩. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি
তাকওয়া হলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর উপস্থিতি স্মরণ করে অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। যারা আল্লাহকে ভয় করে চলেন, তারাই মুত্তাকি। আর মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ভালোবাসা ও পুরস্কার। আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।” (সূরা আত-তাওবা: ৪)

৪. ইহসান বা সৎকর্ম
ইহসান মানে হলো যেকোনো ভালো কাজকে অত্যন্ত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা, এই ভেবে যে আল্লাহ আমাকে দেখছেন। এটি ইবাদত থেকে শুরু করে মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ পর্যন্ত বিস্তৃত। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। কোরআনে এসেছে:

“আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৪)

৫. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা
নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করার পর ফলাফলের জন্য সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ওপর নির্ভর করার নামই তাওয়াক্কুল। যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান এবং তাদের ভালোবাসেন। আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওপর ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান: ১৫৯)

৬. আদল বা ন্যায়বিচার
পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের যেকোনো পর্যায়ে বিচার ও ফয়সালার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও সততা বজায় রাখাকে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের অত্যন্ত পছন্দ করেন। তিনি বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪২)

৭. সবর বা ধৈর্য
বিপদে-আপদে, কষ্টে ও পরীক্ষায় হতাশ না হয়ে আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন এবং তাদের ভালোবাসেন। কোরআনে বলা হয়েছে:

“আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান: ১৪৬)

আসুন, আমরা সবাই এই গুণগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করি। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তার মনোনীত ও প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button