কুমিল্লা ডিএনসির সাবেক পরিদর্শক মাদকাসক্ত শরিফুলের চট্রগ্রামের কর্মকান্ডেও বিতর্কিত

চট্টগ্রামে বদলি হয়েই নতুন বিতর্কে জড়ালেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম। তার অনৈতিক দাবি না মানায় হুমকির মুখে ৫৯ বছরের পুরোনো মদের দোকান বন্ধ। কুমিল্লাতেও তার বিরুদ্ধে ছিল মাসোহারা আদায়, মাদক সেবন ও স্ত্রী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ।
এম শাহীন আলম
দুর্নীতি, মাদক কারবারিদের সঙ্গে আঁতাত, ঘুষ বাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারিসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে বদলি হওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রামে যোগ দিয়েই বিতর্ক
সম্প্রতি চট্টগ্রামে যোগদান করেই পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তার অনৈতিক দাবি পূরণ না করায় তিনি নগরীর কালুরঘাট এলাকার ঊনষাট বছরের পুরোনো ‘কান্ট্রি স্পিরিট শপ’ এর মালিককে হুমকি দিয়েছেন। যার ফলে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দোকানমালিক সাধন রঞ্জন চৌধুরী তার প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে সাধন চৌধুরী জানান, গত ১৪ আগস্ট শরিফুল ইসলাম তার দোকানে গিয়ে হয়রানি করেন এবং অনৈতিক দাবি জানান। কর্মচারীরা সেই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন। পরদিন সাধন চৌধুরী নিজে দেখা করতে গেলে তাকেও অপমান করে বলা হয়, “নিয়ম-কানুন নয়, আমার কথা মতোই ব্যবসা চালাতে হবে।” এই ঘটনার পর নিরুপায় হয়ে তিনি চট্টগ্রাম ডিএনসি-র উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কুমিল্লায় অপকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস
অনুসন্ধানে জানা যায়, শরিফুল ইসলামের অতীত কর্মকাণ্ডও বিতর্কিত। কুমিল্লায় কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫-৭ লক্ষ টাকা মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, মাদক সেবন, নারী কেলেঙ্কারি, এবং নিজের স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। এসব অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে, তিনি উচ্চ পর্যায়ে তদবির করে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন বলে জানা যায়।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিত্তবৈভব
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শরিফুল ইসলাম ডিএনসি-তে চাকরি পান এবং কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি ডিএনসি-র সাবেক এক মহাপরিচালকের স্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে সেই প্রভাবকেও কাজে লাগিয়েছেন বলে জানা যায়।
নারী কেলেঙ্কারি ও পারিবারিক নির্যাতন
শরিফুলের বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। তিনি কুমিল্লার বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউসে নারীদের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রাত কাটাতেন। এসবের প্রতিবাদ করায় তিনি তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালাতেন। তার স্ত্রী নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও শরিফুল ক্ষমতার জোরে তা ধামাচাপা দেন। এমনকি, স্ত্রীকে তালাক ও হত্যার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ আছে।
আইন অমান্য ও দম্ভ
শরিফুলের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে মৌলভীবাজারের একটি আদালত বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের “ম্যানেজ” করে চলেন এবং বিষয়টি সহকর্মীদের কাছে গর্বের সঙ্গে প্রচার করেন।
ফেনীতে কর্মরত অবস্থায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণেও তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন, যা তৎকালীন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ডিএনসি-র দূরত্ব তৈরি করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে পরিদর্শক শরিফুল ইসলামের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।



