
হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব: ভূমি অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং হয়রানিমূলক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমি সেবা প্রদানের বিনিময়ে কর্মকর্তাদের একটি অংশ ঘুষ গ্রহণ করছেন। এই কর্মকর্তারা কখনো সরাসরি, আবার কখনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ঘুষ নিচ্ছেন।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে সরকারি জমি নামজারিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে তিনি সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এই ঘুষ বাণিজ্যে জমির মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ভূমির নামজারির ফি ১,০৭০ টাকা নির্ধারণ করলেও আব্দুল জলিল ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করেন।
এর আগেও ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। কিন্তু তদবিরের মাধ্যমে তিনি পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঘুষের লেনদেনকে নিয়মে পরিণত করেছেন এবং প্রায় প্রকাশ্যেই এই অর্থ আদান-প্রদান চলে।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ:
- নামজারি: সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা।
- খাজনা: ১০০ টাকার খাজনার জন্য ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
- ১৪৫ ধারার মামলার তদন্ত: ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।
- পেরিফেরি দোকান বরাদ্দ: ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা (গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা)।
- ভলিউম বই তল্লাশি: প্রতিটির জন্য ৫০০ টাকা।
- ত্রুটিপূর্ণ কাগজের নামজারি: ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা।
সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ:
১. পাসওয়ার্ড ফাঁস: ভূমি অফিসের কম্পিউটারের গোপন পাসওয়ার্ড পার্শ্ববর্তী একটি কম্পিউটার দোকানে হস্তান্তর করে ভুয়া নামজারির মাধ্যমে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তৎকালীন তালা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জানতে পেরে সেই পাসওয়ার্ড বন্ধ করে দেন।
২. ভুক্তভোগীর অভিযোগ: তালা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের আনোয়ারা বেগম, রুনা খাতুন, রাণী পারভীন, রত্না বেগম ও তাদের ভাই সাইফুল ইসলাম তাদের ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমির নামজারি করতে গেলে নায়েব আব্দুল জলিল ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। চুক্তি অনুযায়ী তারা ৬৮ হাজার টাকা নগদ প্রদান করেন। কিন্তু আব্দুল জলিল দুটি নামজারি (মামলা নং- ২৪৩৪ ও ২৪৩৬) করে দিলেও বাকিদের আবেদন এখনো ঝুলিয়ে রেখেছেন। ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে তিনি আজকাল করে কালক্ষেপণ করছেন।
৩. সরকারি জমি নামজারি:
* গণডাঙ্গা মৌজা: ‘ক’ তফসিলভুক্ত ১১ শতক সরকারি জমি (সাবেক দাগ নং- ২৬৯, হাল দাগ নং- ৫৮৯) ৫০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে নামজারি (মিউটেশন মামলা নং- ৫২২০) করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে সেই জমি বিক্রিও করে দেওয়া হয় (দলিল নং- ১১৭৯)।
* সুজনসাহা মৌজা: এক লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ‘ক’ তফসিলভুক্ত সরকারি জমি মেহেদী ও তাহমিনা নামে নামজারি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সামান্য ভুলত্রুটির অজুহাতে আব্দুল জলিল জমির মালিকদের হয়রানি করেন এবং অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। তার নির্ধারিত ঘুষের টাকা না দিলে কোনো ফাইলই ছাড়পত্র পায় না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নায়েব আব্দুল জলিল তার মোবাইল ফোনে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।



