ইসলাম ধর্ম

প্রতিদিন ৭টি কবুল হজের সওয়াব অর্জনের বিশেষ আমল

দৈনন্দিন কিছু সহজ আমলের মাধ্যমে হজ ও ওমরাহর মতো সওয়াব লাভের সুযোগ রয়েছে। হাদিসের আলোকে জেনে নিন সেই পথ।

ইসলামিক ডেস্ক: পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ করা আবশ্যক। হজের ফজিলত ও প্রতিদান অপরিসীম। তবে এমন কিছু আমল রয়েছে, যা প্রতিদিন পালন করে একজন মুসলিম কবুল হজ ও ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করতে পারেন। হাদিসের আলোকে এমন ৭টি আমলের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

১. ঘর থেকে অজু করে ফরজ সালাত আদায়

মসজিদে গিয়ে জামাআতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে ঘর থেকে পবিত্রতা অর্জন করে মসজিদের দিকে যাত্রা করার রয়েছে বিশেষ ফজিলত।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে অজু করে ফরজ সালাত আদায়ের জন্য বের হলো, তার নেকি একজন ইহরামধারী হাজির নেকির সমান।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস সহিহ, আলবানি তাহকিক মিশকাত- ৭২৮)। এই হাদিস অনুযায়ী, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য ঘর থেকে অজু করে বের হলে পাঁচটি হজের সমান সওয়াব লাভের সুযোগ রয়েছে।

২. ইশরাকের সালাত আদায়

ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে মশগুল থেকে দুই রাকাত সালাত আদায়ের ফজিলত একটি পূর্ণ হজ ও ওমরাহর সমান।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করে, তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ ও ওমরার সওয়াব লাভ হয়।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)

ইসলামিক স্কলার শায়খ বিন বায (রহ.)-এর মতে, এই আমলটি নারীরাও ঘরে বসে করতে পারেন এবং একই সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন।

৩. দ্বীনি ইলম শিক্ষা বা বিতরণের জন্য মসজিদে গমন

জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিতরণের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার আমলটিও একটি পূর্ণ হজের সওয়াব এনে দেয়।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কেবলমাত্র কল্যাণমূলক কিছু (দ্বীন) শিক্ষা করা অথবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মসজিদের দিকে যাত্রা করে, তার জন্য এক পূর্ণ হজের সমপরিমাণ নেকি লিপিবদ্ধ করা হয়।” (ত্ববরানি, সহিহ তারগিব- ৮১)

৪. মসজিদে কুবায় সালাত আদায়

মদিনার মসজিদে কুবায় সালাত আদায়ের ফজিলত একটি ওমরাহর সমান। সাহল বিন হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে মসজিদে কুবায় উপস্থিত হয়ে সালাত আদায় করে, সে ব্যক্তির একটি ওমরাহ আদায় করার সমান সওয়াব লাভ হয়।” (সহিহ নাসাঈ- ৬৭৫)

৫. রমজান মাসে ওমরাহ পালন

রমজান মাসে ওমরাহ পালনের সওয়াব স্বয়ং নবী (সা.)-এর সাথে হজ করার সমতুল্য। মহানবী (সা.) বলেন, “অবশ্যই রমজানের ওমরাহ একটি হজ অথবা আমার সাথে একটি হজ করার সমতুল্য।” (বুখারী ১৮৬৩, মুসলিম ১২৫৬)

কবুল হজের পুরস্কার

এই আমলগুলোর মাধ্যমে অর্জিত সওয়াব কতটা মহিমান্বিত, তা কবুল হজের প্রতিদান থেকে বোঝা যায়।

  • নিষ্পাপ হওয়া: রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয়নি, সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল, যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছে।” (বুখারি-১৪৪৯, মুসলিম- ১৩৫০)
  • জান্নাত লাভ: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, “কবুল হজের পুরস্কার একমাত্র জান্নাত।” (বুখারি- ১৬৮৩, মুসলিম- ১৩৪৯)

এই সহজ আমলগুলো প্রতিদিন নিষ্ঠার সাথে পালন করে মহান আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি অর্জন এবং আমাদের আমলনামাকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই আমলগুলো করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button