জান্নাতের নিশ্চয়তা ও শয়তান থেকে সুরক্ষা: আয়াতুল কুরসির ৮টি বিশেষ ফজিলত
পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ এই আয়াতটি পাঠে মেলে মানসিক প্রশান্তি, ফেরেশতাদের সুরক্ষা এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। জেনে নিন বিস্তারিত।
ইসলামিক ডেস্ক: পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং শক্তিশালী আয়াতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। এটি সুরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত। এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাআ’লার একত্ববাদ, ক্ষমতা, জ্ঞান ও মহত্ত্বের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত এই আয়াত পাঠের মাধ্যমে একজন মুমিন দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য কল্যাণ লাভ করতে পারেন। হাদিসে এর বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নিচে আয়াতুল কুরসির ৮টি বিশেষ ফজিলত তুলে ধরা হলো।
১. জান্নাতে প্রবেশের গ্যারান্টি
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠের পুরস্কার বিশাল। এই সহজ আমলটি জান্নাতে প্রবেশের পথকে সুগম করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়েন, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছুই বাধা হবে না।” (সুনানে নাসাঈ: ৯৯২৮)। অর্থাৎ, এই আমলকারী মৃত্যুর সাথে সাথেই জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করার উপযোগী হয়ে যাবেন।
২. কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত
আয়াতুল কুরসিকে পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে?” উত্তরে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, “আয়াতুল কুরসি।” এর মাধ্যমে এই আয়াতের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
৩. শয়তান ও জ্বিনের প্রভাব থেকে মুক্তি
শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং জ্বিন-ভূতের অশুভ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকতে আয়াতুল কুরসি একটি অমোঘ হাতিয়ার। এটি পাঠ করলে পাঠকারী আল্লাহর সুরক্ষার অধীনে চলে আসে, যা তাকে যাবতীয় কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করে। রাতে ঘুমানোর আগে পাঠ করলে সারারাত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষী নিযুক্ত থাকে।
৪. মানসিক শান্তি ও হৃদয়ের প্রশান্তি
আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা, ভয় এবং মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে আয়াতুল কুরসির তেলাওয়াত অত্যন্ত কার্যকর। এর পাঠ হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয় এবং আল্লাহর ওপর ভরসা বৃদ্ধি করে মানসিক শক্তি জোগায়।
৫. ফেরেশতাদের বিশেষ সুরক্ষা
বাড়ি থেকে কোনো কাজে বা যাত্রার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া যায়। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ৭০ হাজার ফেরেশতা পাঠককে চারদিক থেকে ঘিরে রাখেন এবং সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।
৬. দারিদ্র্য ও অভাব থেকে মুক্তি
রিজিকের প্রশস্ততা এবং ঘর থেকে অভাব-অনটন দূর করার জন্য এটি একটি পরীক্ষিত আমল। বাড়িতে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে সেই গৃহে আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হয় এবং দারিদ্র্য প্রবেশ করতে পারে না।
৭. আল্লাহর ক্ষমতার স্বীকৃতি ও ঈমানের দৃঢ়তা
আয়াতুল কুরসি কেবল একটি দোয়াই নয়, এটি আল্লাহর ক্ষমতার এক অনবদ্য স্বীকৃতি। এতে আল্লাহ তাআ’লার অসীম জ্ঞান, রাজত্ব ও সার্বভৌমত্বের ঘোষণা রয়েছে। এই আয়াতের অর্থ অনুধাবন করে পাঠ করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান আরও মজবুত ও সুদৃঢ় হয়।



