সুনামগঞ্জে স্বপন হাজীর উত্থান: রাজমিস্ত্রি থেকে শত কোটি টাকার মালিক, তদন্তের দাবি স্থানীয়দের

মো: আরিফুর রহমান মানিক: একসময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করা সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার স্বপন হাজী এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। স্থানীয়দের অভিযোগ, অস্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠা এই বিপুল সম্পদের পেছনে রয়েছে নানা অনিয়ম, সরকারি দপ্তরের যোগসাজশ এবং প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদ।
বিপুল সম্পদের মালিকানা
স্থানীয় সূত্র জানায়, শহরে স্বপন হাজীর অন্তত পাঁচ থেকে সাতটি বিলাসবহুল বাড়ি এবং একাধিক দামি গাড়ি রয়েছে। তার সম্পদের উৎস নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির সঙ্গে যোগসাজশ
অভিযোগ রয়েছে, স্বপন হাজী ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় কোটি কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি “বিসমিল্লাহ সোনালী চেলা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড”-এর নামে প্রায় ৭১ কোটি টাকার পুরাতন মালামালের একটি টেন্ডার পান। টেন্ডারের মেয়াদ শেষের পথে থাকলেও এই প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রভাব
স্বপন হাজীর বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক উপ-প্রকৌশলীকে আর্থিকভাবে প্রভাবিত করে প্রকল্প বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পূর্ববর্তী সময়ে তিনি প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাজ পান। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানের নামে দোয়ারাবাজারে দেড় কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান।
বালি-পাথরের ব্যবসা ও সীমান্ত সংযোগ
ছাতক থেকে পরিচালিত বালি ও পাথরের ব্যবসার সঙ্গেও স্বপন হাজীর নাম উঠে আসছে। স্থানীয়দের দাবি, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া, দোয়ারাবাজারের নরসিংপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় তার বাড়ি হওয়ায় ভারতীয় চোরাকারবারিদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ থাকার সন্দেহ করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, নদীপথে ভারতীয় চোরাই বালি-পাথর পরিবহনের ব্যবসায় তার মালিকানাধীন একাধিক জাহাজ ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয়দের প্রশ্ন ও দাবি
স্থানীয়দের প্রশ্ন, একজন সাধারণ রাজমিস্ত্রি কীভাবে এত অল্প সময়ে শত কোটি টাকার মালিক হলেন? সরকারি দপ্তরগুলোই বা কেন এ বিষয়ে নীরব? তাদের দাবি, স্বপন হাজীর সম্পদের উৎস, সরকারি টেন্ডার প্রাপ্তি এবং বালি-পাথর ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা
অভিযোগ রয়েছে, স্বপন হাজী দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, তাকে যথাযথভাবে আইনের আওতায় আনা হলে তার অবৈধ সম্পদ ও ব্যবসার প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে।



