ইসলাম ধর্ম

নবীজি (সা.)-এর শেখানো যে দোয়া দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে পরিপূর্ণ

এক বেদুঈনের সহজ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর প্রশংসা এবং নিজের জন্য ক্ষমা, রহমত ও রিজিক চাওয়ার অপূর্ব সমন্বয় শিখিয়েছেন বিশ্বনবী (সা.)।

ইসলামিক ডেস্ক: ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ইবাদতের মূল এবং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার যোগাযোগের অন্যতম সেরা মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাহাবিদের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী নানা দোয়া শিখিয়েছেন। এমনই একটি ঘটনা হাদিসের পাতায় বর্ণিত হয়েছে, যেখানে এক বেদুঈন সাহাবির মাধ্যমে পুরো উম্মত এমন একটি সমন্বিত দোয়া লাভ করেছে, যা আল্লাহর প্রশংসা এবং বান্দার ব্যক্তিগত প্রয়োজন—উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট: এক বেদুঈনের আরজি

হাদিস শরীফে এসেছে, একবার এক বেদুঈন (মরুবাসী আরব) ব্যক্তি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে হাজির হন। তাঁর আরজি ছিল অত্যন্ত সহজ ও সরল। তিনি বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু কথা শিক্ষা দিন, যা আমি নিয়মিত পাঠ করব।”

তাঁর এই সাধারণ অনুরোধের জবাবে নবীজি (সা.) তাকে এমন একটি দোয়া শেখান, যা তাসবিহ (পবিত্রতা বর্ণনা), তাহমিদ (প্রশংসা), তাহলিল (একত্ববাদের ঘোষণা) এবং তাকবির (মহত্ত্ব বর্ণনা) দ্বারা সুশোভিত।

প্রথম দোয়া: মহান রবের প্রশংসা

রাসূল (সা.) তাকে প্রথমে মহান আল্লাহর প্রশংসায় পাঁচটি বাক্য বলতে বলেন:

১. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু: (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই)। এটি তাওহিদের সর্বোচ্চ ঘোষণা।
২. আল্লাহু আকবারু কাবিরা: (আল্লাহ সবচেয়ে বড়, অতীব বড়)। এটি আল্লাহর মহত্ত্বের স্বীকৃতি।
৩. ওয়ালহামদু লিল্লাহি কাসিরা: (আল্লাহর জন্য অনেক ও অজস্র প্রশংসা)। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন।
৪. সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আলামিন: (সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান)। এটি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা।
৫. লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আযিযিল হাকিম: (প্রবল পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় বা শক্তি নেই)। এটি আল্লাহর ক্ষমতার কাছে বান্দার চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের স্বীকারোক্তি।

বেদুঈনের বিচক্ষণ প্রশ্ন এবং দ্বিতীয় দোয়া

এই দোয়াটি শেখার পর বেদুঈন লোকটি একটি অত্যন্ত চমৎকার প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, “এগুলো তো আমার রবের জন্য হলো, কিন্তু আমার নিজের জন্য কী?”

তাঁর এই প্রশ্নে নবীজি (সা.) অত্যন্ত খুশি হন এবং তাকে নিজের জন্য চাওয়ার দোয়াটিও শিখিয়ে দেন। তিনি বলেন, “বলো:

“আল্লাহুম্মাগফির লি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি।”

এই দোয়াটিতে বান্দার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের পাঁচটি অপরিহার্য বিষয় চাওয়া হয়েছে:

  • মাগফিরাত (ক্ষমা): “হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন।”
  • রহমত (দয়া): “আমাকে দয়া করুন।”
  • হিদায়াত (সঠিক পথ): “আমাকে হিদায়াত দিন।”
  • আফিয়াত (নিরাপত্তা ও সুস্থতা): “আমাকে নিরাপত্তা দিন।”
  • রিজিক (জীবিকা): “এবং আমাকে রিজিক দান করুন।”

রাসূল (সা.)-এর মন্তব্য: কল্যাণে পরিপূর্ণ হাত

বর্ণনাকারী বলেন, বেদুঈন লোকটি এই দোয়া দুটি শিখে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মন্তব্য করেন, “লোকটি তার দুই হাত কল্যাণে পরিপূর্ণ করে নিল।”

এই হাদিসটি আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর কাছে চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো প্রথমে তাঁর প্রশংসা ও গুণগান করা, অতঃপর নিজের দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা। এই দোয়াটি সেই আদর্শের এক অনবদ্য উদাহরণ। যে ব্যক্তি এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করবে, সে একদিকে যেমন আল্লাহর জিকিরের সওয়াব পাবে, তেমনই নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আল্লাহর কাছে চেয়ে নিতে পারবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button