অধ্যাপক এম এ বার্ণিক: ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা আগামী জাতীয় নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
১. ভূমিকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নির্বাচন সর্বদাই একটি সংবেদনশীল ও বিতর্কিত বিষয়। জনগণের বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তেমনি নির্বাচনকালীন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাও সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। অথচ বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামান্য মব-কাণ্ড সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এরপরও তারা জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট বাক্সের পাহারাদার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেখানে হিমশিম অবস্থা:
- সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-যুবক বা শ্রমজীবী মানুষের ক্ষুদ্র মিছিল ও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে।
- বিশ-ত্রিশজনের একটি দল যখন থানার সামনে বা কোনো সড়ক অবরোধ করে, তখনও পুলিশ ও প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই ভঙ্গুর অবস্থা সাধারণ নাগরিককে প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে—যেখানে ছোটখাটো ভিড় সামলানো যাচ্ছে না, সেখানে ভোটকেন্দ্রের হাজারো ভোটার, প্রার্থী, এজেন্ট ও সমর্থককে কীভাবে সামলানো হবে?
৩. নির্বাচনকালীন বাস্তবতা:
জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার সময় উত্তেজনা তৈরি হয়। এখানে সশস্ত্র হুমকি, গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের বাহুবল এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি দৈনন্দিন ছোটখাটো মব-কাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারায়, তবে নির্বাচনকালীন এই জটিলতা মোকাবিলায় তাদের ব্যর্থ হওয়াই স্বাভাবিক।
৪. ব্যালট বাক্স রক্ষার দায় কার:
ব্যালট বাক্স শুধু একটি বাক্স নয়; এটি জনগণের আস্থা, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্রের প্রতীক।
- নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচন নিরাপদ হয় না।
- রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে: শুধু কাগজে-কলমে নিরপেক্ষতার ঘোষণা নয়, বাস্তব পদক্ষেপ ও স্বচ্ছতা দেখাতে হবে।
- আন্তর্জাতিক তদারকি: বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরদারি ছাড়া দুর্বল সরকার সাধারণত আস্থাহীন থাকে।
৫. জনমতের প্রশ্ন:
- যে সরকার রাষ্ট্রের ভেতরে দশ-পনেরো জনের মব রোধ করতে পারে না, তারা কি লাখো ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে?
- যদি সরকার নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স রক্ষায় ব্যর্থ হয়, তবে কি আবারও জনগণের রক্ত ঝরবে?
- এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন আয়োজন কি গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হবে, নাকি একটি নতুন প্রহসন সৃষ্টি করবে?
৬. নির্বাচনের সক্ষমতাই প্রশ্নবিদ্ধ:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার আজ এক জটিল দ্বন্দ্বে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে তারা নিজেদের “অন্তর্বর্তীকালীন অভিভাবক” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দক্ষতায় ঘাটতি তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করছে। জনগণের দৃষ্টিতে তারা এখনো প্রমাণ করতে পারেনি যে, তারা সত্যিকার অর্থে নির্বাচনের ব্যালট বাক্সের পাহারাদার হওয়ার মতো সক্ষম। তাই এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই দুর্বল শাসনক্ষমতা নিয়ে কি বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে, নাকি আবারও রাজনৈতিক অবিশ্বাস ও সংঘাতের গভীর খাদে পতিত হবে?



