মায়ের গরু বিক্রির টাকায় পড়াশোনা, বাবার স্বপ্নপূরণ: সিকিউরিটি গার্ডের ছেলে এখন বিচারক
দিনে টিউশনি আর রাতে পড়াশোনা করে অদম্য স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন গোলাম রসুল সুইট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে পড়াশোনা শেষ করে ১২তম বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের সামনে যে কোনো প্রতিকূলতাই হার মানতে বাধ্য, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন গোলাম রসুল সুইট। ঢাকার এক নিরাপত্তাকর্মীর ছেলে, যার পড়াশোনার খরচ জোগাতে বিক্রি করতে হয়েছিল মায়ের শেষ সম্বল—একটি গরু, সেই ছেলেই আজ বিচারকের আসনে বসতে যাচ্ছেন। ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী জজ পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তার এই সাফল্যে পরিবার ও গ্রামজুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা।
গোলাম রসুল সুইটের বেড়ে ওঠার পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। তার বাবা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে জন্ম নেওয়া সুইটের শৈশব কেটেছে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে। তবে দারিদ্র্য তাকে দমাতে পারেনি, বরং কঠিন বাস্তবতাই তাকে দিয়েছে বড় হওয়ার অফুরন্ত অনুপ্রেরণা।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। স্বপ্ন দেখতেন একদিন বড় হয়ে মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে পদে পদে ছিল বাধার দেয়াল।
- সংগ্রামের দিনগুলো: দিনের বেলায় তিনি টিউশনি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতেন, আর রাতের বেলা জেগে পড়াশোনা করতেন।
- মায়ের আত্মত্যাগ: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ঘনিয়ে এলে দেখা দেয় আর্থিক সংকট। ভর্তি ফি জোগাড় করতে তার মা তার অতি আদরের একমাত্র গরুটি বিক্রি করে দেন।
- থেমে না যাওয়ার প্রত্যয়: টাকার অভাবে ঢাকায় ভালো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে না পেরে হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সহপাঠী ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আবারও ঘুরে দাঁড়ান এবং নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করেন।
সমস্ত বাধা পেরিয়ে গোলাম রসুল সুইট ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীনও তিনি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। তার নিরলস পরিশ্রমের ফল আসে ১২তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে, যেখানে তিনি সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গোলাম রসুল সুইট বলেন, “আমার বড়লোক হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আমি বিচারকের আসনে বসে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই।”
এই সাফল্যে তার বাবা-মায়ের চোখে আজ আনন্দাশ্রু। যে বাবা নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে অন্যের সম্পদ পাহারা দিয়েছেন, আজ তার ছেলেই দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রহরী হতে চলেছেন। সুইটের এই অর্জন এখন শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো গ্রামের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।



