অপরাধআইন, ও বিচারদুর্নীতিপ্রশাসনবাংলাদেশসংগৃহীত সংবাদ

পুলিশ কর্মকর্তা আলিম মাহমুদ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব: বাড়ির পর বাড়ি। জমি এবং ফ্ল্যাটের সারি। কী নেই এই পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম মাহমুদের । ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শুধু নিজের নামে নয় স্ত্রী ও সন্তানের নামেও গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি । আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য যার সত্যতাও মিলেছে। সম্পদের নথিও এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে মেয়ের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ কত তার হিসাব মিশানো কঠিন।

ঢাকায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা ও রংপুরে সহ দেশের বিভিন্নস্থানে শত শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকার মধ্যে রয়েছে ১০০ কোটি টাকার উর্ধ্বে সম্পদ যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নানারকমের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন।

স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের নেশায় বুঁদ পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল আলীম মাহমুদ। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ও বর্তমানে ওএসডি হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সংযুক্ত। তিনি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান । ১৯৯৫ সালে আবদুল আলীম মাহমুদ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করার পরই পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। এই পুলিশ কর্মকর্তা শুধু নিজের নামেই নন, সম্পদ গড়েছেন পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামেও। সাতক্ষীরায় স্ত্রী-সন্তানের নামে কিনেছেন বিঘার পর বিঘা জমি। শ্বশুরবাড়ি রংপুরে তিনি মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজি থাকাকালে সেখানেও নামে-বেনামে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ।

জানা গেছে, আবদুল আলীম মাহমুদ ১৯৯৫ সালে ১৫ তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ফজলুল হক হলের নির্বাচিত বার্ষিকী সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়ায় সাধারণ ছাত্ররা আবদুল আলীমের ২৩৪ নম্বর কক্ষটি ভাঙচুর করেন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে তাকে সান্ত্বনা দেন। সেই সময়কার একটি ছবি আবদুল আলীমের কাছে সংরক্ষিত ছিল। ছবিটিকে পুঁজি করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে এই কর্মকর্তা পুলিশের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবদুল আলীম মাহমুদ পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে নড়াইল, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজার জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় তিনি ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে পুলিশ টেলিকম বিভাগের এআইজি টেলিকম হিসেবে দুই দফা দায়িত্ব পালনের সময় কেনাকাটায় অনিয়ম করে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেন। এতকিছুর পরও মেধাতালিকার তলানিতে থাকা আলীম মাহমুদ ৫৩ জনকে ডিঙিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। দ্রুত পেয়ে যান ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতি। পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পছন্দের ব্যক্তি হিসেবে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রথম কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালে বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন । এর পুরস্কার হিসেবে ২০১৯ সালে তাকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) সেবা পদক দেওয়া হয়। রংপুরের কমিশনার থেকে তাকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও পরে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের ডিআইজি হিসেবে পদায়ন করা হয়। গত বছরের ১৩ মার্চ বহু কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মোহা. আলীম মাহমুদ অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে নৌপুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত অবস্থায়ও অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে নানাভাবে ব্যবহার করেন। সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর নৌপুলিশ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজি হিসেবে বদলি ও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ওএসডি করা হয়েছে।

প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্মের মূল হোতা তিনি।
পতিত স্বৈরাচারি সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ফ্ল্যাট ও জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রংপুরে রয়েছে তার নিজস্ব সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ও বিভিন্ন মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে রংপুর নুর ইসলাম বাবুর ৪ কোটির টাকার জমি মাত্র ৬০ লাক দিয়ে কিনেছে আব্দুল আলিম মাহমুদ।যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। জীবনের ভয়ে তিনি এই জমি লিখে দিয়েছেন বলে জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আবদুল আলীম মাহমুদের বড় শ্যালক তার সব অপকর্মের সঙ্গী। তিনি মৌভাষা এলাকায় ৮৭ শতাংশ ওষুধালয়ের জমি ৯ কোটি টাকায় কেনেন। প্রকৃতপক্ষে ওই জমির দাম অনেক বেশি। আবদুল আলীমের দূরসম্পর্কের আরেক শ্যালক নগরীর মাহিগঞ্জের দেওয়ানটুলী এলাকার হুমায়ুন কবির টুলু একসময় মোটর শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদের ক্যাডার ছিলেন। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর পর গা ঢাকা দিয়ে থাকেন টুলু। পরে আবদুল আলীম মাহমুদের আস্থাভাজন হয়ে যান।

স্থানীয় মশিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন,তৌহিদুল ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা। আবদুল আলীমের ভাগনে জামাই তৌহিদুল বাহিনীর নেতৃত্বে আমাদের বসতবাড়ি ও জমি দখল করা হয়েছে বলে জানান। তৌহিদুল ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, তাঁর বাবা মোহাম্মদ আলী ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল ৫৩১০ নং দলিল মূলে ডা. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে ৬ শতক এবং ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১৭৯১ নং দলিল মূলে একই দাগে সাহেরা বানুর কাছ থেকে ১২ শতক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে আমার পিতা ২০১৪ সালের ১৯ জুন ৯৫৭৭ নং হেবা দলিল মূলে ৬ শতক এবং ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল ৬৩৭৫ নং হেবা দলিল মূলে ১২ শতকসহ মোট ১৮ শতক জমির মালিকানা প্রাপ্ত হই। আমার পিতা বেঁচে থাকাকালীন সময়ে বসতবাড়ি ও দোকানঘর নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছি।

তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীমের ভাগনে জামাই আকিফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (মুহাম্মদ আবদুল আলীমের সম্বন্ধী, ন্যাশনাল ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেনের শ্যালকের জামাই), ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও তার বাহিনী ১০০-১৫০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে আমার বসতবাড়ি ও দোকানপাট জোরপূর্বক দখল করে পরিবার-পরিজনসহ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। শুধু তাই নয়, ওই সময় আমি কোতোয়ালি থানায় মামলা করলেও তদন্ত কর্মকর্তা, তৎকালীন এসআই এরশাদ আমাকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করতে সাদা কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন। এসব বিষয় নিয়ে সেই সময় বিভিন্ন টেলিভিশন এবং অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হয়।

মশিউর রহমান আরো বলেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদের ভাগনে জামাই আকিফুল আমার বসতবাড়ি ও দোকানপাট পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের দিয়ে দখল করার পর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জমি ক্রয় দেখিয়ে একটি ভুয়া দলিল (দলিল নং ২০৬৬৮) তৈরি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমি যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে ওই ভুয়া দলিল বাতিল চেয়ে মামলা করি। ওই মামলায় আদালত ভুয়া দলিল বাতিল ও জবরদখলকারী আকিফুলকে উচ্ছেদ করতে রায় দেন। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমি পরিবার-পরিজনসহ গত ২ আগস্ট আমার পৈতৃক সম্পত্তিতে বসবাস শুরু করি। কিন্তু আবারও সাবেক পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আবদুল আলীমের ভাগনে জামাই আকিফুল ইসলাম টুটুল তার পুলিশ শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়ে এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আবারো আমার বসতবাড়ি ও দোকানপাটে সন্ত্রাসী হামলা চালায়।

তথ্য অনুসন্ধানে, পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল আলীম মাহমুদ তালা উপজেলার লক্ষ্মণপুরে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আনছার মাহমুদ এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং’। এই এতিমখানায় অনুদান নেওয়ার নামে বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করেন। ছাত্রলীগ নেতা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। কারণ তার বিরুদ্ধে গেলেই সিরিজ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো।

কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর রংপুরে ‘মানবতার বন্ধন’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলেন আবদুল আলীম মাহমুদ। ব্যবসায়ী, মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ডোনেশন নেন তিনি। সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে হুমকি দিতেন। এ ছাড়া নগরীর দর্শনা এলাকায় মানবতার বন্ধন নামের একটি এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লাখ লাখ টাকা অনুদান নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অনুদান নিতে তিনি রংপুরের রয়েলেটি মেগামলের চেয়ারম্যান তানবীর হোসেন আশরাফিকেও ব্যবহার করেন।

তালা উপজেলা তার নিজ এলাকায় করেছেন ক্ষমতার অপব্যবহার। ক্ষমতাসীন আও: লীগের সময়ে জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এসব নেতৃত্বাধীন ছিলেন তার ভগ্নিপতি নজিবুল হক ও হারুনর রশীদ কলেজের অধ্যাপক তার চাচাত ভাই রকিব সহ আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। তালা ও পাটকেলঘাটা থানা ছিলো তাদের হাতের মুঠোয়। তার ভগ্নিপতি নজিবুল হক তার নিজ জন্মদাতা পিতার নাম পরিবর্তন করে চৌগাছা জনৈক র‌ওশনারার ক্রয়কৃত ৩১ শতক বসতভিটা তার স্বামীর মৃত্যুর পর মাঠ জরিপের সময়কালীন নবীজুল হক ভুয়া খতিয়ান খুলে জাল দলিল করে ১৫ শতক জমি নিজের নামে তঞ্চকতার মাধ্যমে রেকর্ড করিয়ে নেয়।

তালা আটার‌ই গ্রামে সুবহান সরদার দীর্ঘদিন ধরে দুবাই থাকার সুবাদে তার স্ত্রী ফরিদা দেবর হায়দার ও দেদারুলের সঙ্গে অবৈধ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। মায়ের সাথে অবৈধ মেলামেশা তার কন্যা শিল্পী মেনে নিতে পারেনি। অবৈধ পরকীয়ায় শিল্পী বাধা হয়ে দাড়াঁলে মা ফরিদা ও চাচা যোগসাজশে শিল্পীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এলাকাবাসী বিষয়টি তালা থানায় অবহিত করলে ডিআইজি আলিম মাহমুদের একটি ফোন কলে তালা থানা প্রশাসন ময়না তদন্তে না পাঠিয়ে নিহত লাশের দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। এলাকাবাসী থানা ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে আলিম মাহমুদের নেতৃত্বে তার ভগ্নিপতি আবুল জোয়ার্দার, ফেসবুক সাংবাদিক আব্দুল্লাহ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। থানায় মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তদবির বানিজ্য করে শিল্পী হত্যাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির:
ডুমুরিয়ায় থানা এলাকায় আশরাফ আলীর ছেলে মুজাহিদ হোসেনের স্ত্রীর সাথে আলিম মাহমুদের পরকীয়া সম্পর্ক থাকায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ বিবাদে সংসার জীবন বিচ্ছেদ ঘটে। আলিম মাহমুদের সাথে কয়েক বার শারীরিক মেলামেশার কথা তার স্ত্রী কারোক্তি প্রকাশ করে। তার একটি ভিডিও তথ্য প্রকাশ করা হয়।

স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড় মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদের ঢাকার শান্তিনগর, বনশ্রী ও পূর্বাচলে এবং সাতক্ষীরা, রংপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। রংপুরে দুলাল স্বরনী সার্কালার রোড নং ২/৩ মিস্ত্রী পাড়ায় তার স্ত্রী জেসমিন আলিম নাহারের নামে ৫ তলা আলিশান বাড়ি। তার এক মেয়ে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। সেই মেয়ের নামেও দেশে অঢেল সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা মেয়ের নামে ২০২২ সালে ৩০ মে রংপুর জেলার তাজহাট থানার দর্শনার ফতেপুর এলাকায় প্রায় ২০ কাঠা জমি কেনেন এবং ২০২৩ সালের ২৬ জুন রংপুরে দর্শনার দাঙ্গিরপুরে আরপিএমপি অফিসার্স হাউজিং এলাকায় ১৪ কাঠার বেশি জমি কেনেন। এ ছাড়া সাতক্ষীরার তালা উপজেলার লক্ষ্মণপুর এলাকায় হাইওয়ের পাশে ২০১৫ সালে ৯ নভেম্বর ১৫ কাঠা এবং ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর সাড়ে ৫ কাঠার বেশি জায়গা কেনেন। একই এলাকায় ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১৪ কাঠা, একই বছর ১১ মার্চ ১৫ কাঠার বেশি, ও পরদিন ১২ মার্চ ৬ কাঠা জায়গা ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। লক্ষ্মণপুরে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই আরও ৬ কাঠা, ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ৩ কাঠা, ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রায় ১৯ কাঠা ও ২০২২ সালের ৩১ মার্চ প্রায় ৮ কাঠা জমি কেনেন।

এ ছাড়া ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিজের নামে পূর্বাচলে ১৭ নম্বর সেক্টরে ৪০২/এ রোডে প্রায় ৫ কাঠার একটি প্লট কেনেন (প্লট নম্বর ১৪)। ২০১৯ সালে ২৭ জুন রাজধানীর খিলক্ষেতের ২ নম্বর সেক্টরে ২০৭ নম্বর রোড এলাকায় নিজের নামে সাড়ে ৪ কাঠার প্লট কেনেন। ২০২৩ সালের ২১ জুন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের বড় কুশিয়ারা এলাকায় মেয়ের নামে সাড়ে ৬ কাঠার বেশি জায়গায় জমি কেনেন। ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট স্ত্রীর নামে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার লক্ষ্মণপুর এলাকায় হাইওয়ের পাশে সাড়ে ১১ কাঠা জায়গা কেনেন। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মদনপুরের ঈদগাহের দিঘি এলাকায় মেয়ের নামে ৩ কাঠা জমি কেনেন।

এসব স্থাবর সম্পদ ছাড়াও রংপুরে হাউজিং প্রকল্পে কিনেছেন কোটি টাকার জমি। রংপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাহেবের দিঘি এলাকায় ৫০ শতক জমি, রংপুর জেলা পরিষদ সিটি সেন্টার নামে নির্মাণাধীন একটি অভিজাত শপিংমলে আবদুল আলীম মাহমুদের স্ত্রী দুটি দোকান ক্রয় করেন। নগরীর দর্শনা এলাকার দীপ আই কেয়ারের বিপরীত পাশে পুলিশ সোসাইটিতে দুটি প্লট কেনেন আলীম মাহমুদ। এতিমখানার সামনে জায়গা দখল করে ১ বিঘা জমি কিনেছেন ৪০ লাখ টাকায়, সাতক্ষীরা হাইওয়েতে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার জমির ওপর কোটি টাকা ব্যয়ে বসিয়েছেন নাহার ফিলিং স্টেশন। এ ছাড়া মোহা. আলীম মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। যাহা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

তাঁর রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী:
আবদুল আলীমের দূরসম্পর্কের শ্যালক নগরীর মাহিগঞ্জের দেওয়ানটুলী এলাকার সন্ত্রাসী হুমায়ুন কবির টুলু একসময় মোটর শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদের ক্যাডার ছিলেন। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর পর গা ঢাকা দিয়ে থাকেন টুলু। পরে আবদুল আলীম মাহমুদের আস্থাভাজন হয়ে সেও অর্জন করেছে অবৈধ অনেক সম্পদ।

ইতালি প্রবাসী সোহেল হাওলাদারের কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে তার সাথে প্রতারণা করেছে তার শালক হুমায়ুন কবর টুলু। সেই বিষয়ে আব্দুল আলীম সাহেবের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অফিসে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও তিনি কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেনি বলে জানান ইতালি প্রবাসী।

আবদুল আলীম মাহমুদের শ্যালক টুলু কবীর কাছ থেকে সাড়ে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ।ফেরত চাইলে টুলু কবীরের দুলাভাই পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল আলীম সাহেবর কথা বলে বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি হুমকি প্রদান করে বলে, তার দুলাভাই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেশী বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে সারা জীবন জেলে পঁচিয়ে মারবো। তার পরেই আব্দুল আলীমের সহযোগিতায় ইতালি প্রবাসী সোহেলর বিরুদ্ধে হুমায়ুন কবির টুলু একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। দুই মাসের অধিক সময় জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়।

অসৎ, দুর্নীতিবাজ পুলিশ এ পুলিশ কর্মকর্তা সহ
পুলিশ বাহিনীসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ, অসৎ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ভুক্তভোগী ও সুশীল সমাজ।

এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোহা.আব্দুল আলীম মাহমুদের বিপুল স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button