অবশেষে বিটিভিতে ‘ফরিদ-তাসমিনা-শামসুল’ যুগের পতন শুরু: ফরিদের শাস্তির আদেশ বাতিলে কোটি টাকা বরাদ্দের অভিযোগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক:বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) বার্তা বিভাগে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ‘ফরিদ-তাসমিনা-শামসুল’ সিন্ডিকেটের পতন শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছিলেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণের ভিত্তিতে মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্র থেকে ঠাকুরগাঁও উপকেন্দ্রে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের টেলিভিশন-১ শাখা থেকে উপসচিব মো. ইব্রাহিম ভূঞা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। অন্যথায়, উক্ত তারিখ থেকে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ট্যান্ড রিলিজড হিসেবে গণ্য হবেন।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের প্রেস উইংয়ের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর কীভাবে বার্তা প্রধানের পদে বহাল ছিলেন, তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। শুধু তাই নয়, ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও মুন্সী ফরিদুজ্জামান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে বিটিভির প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি দম্ভের সঙ্গে বলতেন, কেউ তাকে সরাতে পারবে না। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও এ. আরাফাতের আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ৫ আগস্টের পর নিজেকে কখনো বিএনপি, কখনো জামায়াত বা কখনো এনসিপি’র অনুসারী দাবি করে বিটিভির বার্তা বিভাগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেরিতে হলেও তার এই বদলির আদেশে বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
সম্প্রতি রাজধানীতে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন বিটিভির বার্তা বিভাগের ‘ফরিদ-তাসমিনা-শামসুল’ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে প্রশ্ন তোলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পরও কীভাবে সাবেক সরকারের আস্থাভাজনরা বিটিভিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন? তারা আরও অভিযোগ করেন যে, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন তদন্তে দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হওয়ার পরও কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে এদের রক্ষার জন্য একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। সংগঠনটি অবিলম্বে আশ্রয়দাতাসহ সকল দুর্নীতিবাজকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
সূত্র জানায়, মুন্সী ফরিদুজ্জামানের বদলির আদেশ স্থগিত করতে অথবা তার স্থলে একই সিন্ডিকেটের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে বসানোর জন্য বিটিভির মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম এবং জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আজম পবন মন্ত্রণালয়ে জোর তদবির এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন। তবে তার অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য সেই তদবিরে তেমন সাড়া মিলছে না। অন্যদিকে, বদলির আদেশ সত্ত্বেও মুন্সী ফরিদ বিটিভি ছাড়বেন না বলে তার আস্থাভাজনদের কাছে চ্যালেঞ্জ করছেন। প্রশ্ন উঠেছে, টাকার জোরে এবারও কি পার পেয়ে যাবেন মুন্সী ফরিদুজ্জামান?
অভিযোগ রয়েছে, উপমহাপরিচালক (বার্তা) ড. তাসমিনা আহমেদ, মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামান এবং নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলম গত ১৬ বছরে বিটিভির বার্তা শাখাকে আওয়ামী লীগের প্রচার সেলে পরিণত করেছিলেন। এমনকি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় তারা ছাত্র-জনতাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখিয়ে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিলেন, যার জন্য তারা সাবেক সরকারের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন।



